বয়স বাড়ার সাথে সাথে যে সমস্যাটি সকলের মধ্যেই দেখা দেয় তা হলো বাতের ব্যাথা। বাতের ব্যথা অবশ্য শুধু হাঁটুতেই থেমে থাকে না। হাঁটুর সাথে সাথে কোমর, পিঠ, হাতেও বাতের ব্যথা অনুভূত হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের ক্ষয় হতে থাকে। হাড়ের মধ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থেকে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যেতে থাকে। আর সেই থেকেই বাতের ব্যথা এসে হাজির হয়। বাতের ব্যথা ধীরে ধীরে পরিণত হয়ে যায় রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে। নামের সাথে আর্থ্রাইটিস কথাটি জড়িত থাকলেও বাতের সাথে এর কোনোরূপ সম্পর্ক নেই। এটি একধরণের অটোইমিউনো রোগ। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন সংযোগস্থলে ব্যথা অনুভূত হয়। সেইসব জায়গা যথারীতি ফুলেও ওঠে। বাতের ব্যথার সাথে যথেষ্ট মিলও রয়েছে এই ব্যথার। অন্য সব ব্যথার থেকে এই ব্যথা আলাদা হয়ে থাকে। এই ব্যথা বিশ্রাম নিলে আরও বেশি অনুভূত হয়।
এই রোগের কারণ এখনো ঠিকভাবে জানা না গেলেও গবেষকদের দাবি, এই রোগের পিছনে কিছু জিনঘটিত কারণ এবং পরিবেশগত কারণ থেকে থাকে। এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ ইমিউনো সিস্টেম শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টকে আক্রমণ করে থাকে। এর ফলে জয়েন্ট ক্যাপসুলে প্রদাহ হতে থাকে আর তার ফলেই অনুভূত হয় ব্যথা। কিন্তু সম্প্রতি গবেষকগণ এর কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আবিষ্কার করেছেন এই রোগের অন্যতম একটি কারণ। তারা জানাচ্ছেন, অন্য কারণগুলির থেকে বেশি ক্ষতিকারক কারণটি হলো ধূমপান। ধূমপানের ফলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু ধূমপান যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ঘটাতেও সমান ভূমিকা গ্রহণ করে তা এতদিন অজানাই থেকে গেছিলো। সম্প্রতি গবেষণার ফলে উঠে আসা তথ্য থেকে জানা গেছে, যে ব্যক্তি ২০ বছর বা তার বেশি বয়স ধরে ধূমপান করছে তার এই ধরণের আর্থ্রাইটিস হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। এমনকি তাদের ক্ষেত্রে সিভিয়ার রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ধূমপান এই রোগে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতাও নষ্ট করতেও অধিক সক্রিয়। অনেক মানুষ যারা অন্য কোনো কারণের ফলে এই রোগে ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে ধূমপান আরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শুধু ধূমপান করলেই এই রোগ বাড়ে তা কিন্তু নয়। পরোক্ষ ধূমপানের ফলেও সেই ব্যক্তির সমান ক্ষতি হয় যা ধূমপান করলে হতো।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস একধরণের অটোইমিউনো রোগ। তাই এই রোগের ক্ষেত্রে শরীর তার নিজের বিরুদ্ধেই অ্যান্টিবডি গড়ে তোলে। আর এই অ্যান্টিবডি অস্থিসন্ধিতে গিয়ে আক্রমণ করে থাকে। যারা ধূমপান করেন তাদের শরীরে এইধরণের অ্যান্টিবডি বেশি তৈরী হয়। তাই চিকিৎসকেরা ধূমপান যতটা সম্ভব কমানোর কথা বলেছেন। এছাড়াও ধূমপানের ফলে শরীরের নানাদিকের ক্ষতি হয়। তাই চিকিৎসকের কথা মেনে ধূমপান বন্ধ করে দেওয়াই শ্রেয়।