পরোক্ষ ধূমপানের ফলাফল

ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। এমন কথা শুনতে শুনতেই আমরা বড় হয়েছি। ধূমপান করলে শরীরে হানা দিতে পারে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, সিওপিডি প্রভৃতি রোগ তো রয়েছেই। কিন্তু এমনটাও তো অনেকসময় হয় যে আপনি বা আপনার কাছের কোনো প্রিয়জন ধূমপান করেন না অথচ তিনিও ক্যান্সারের মতো রোগের জ্বালায় জর্জরিত। সেটা কিভাবে সম্ভব? শ্বাসযন্ত্রের ক্যান্সার বা চেস্ট সংক্রান্ত কোনও রোগ হলে চিকিৎসক প্রথমেই জিজ্ঞেস করেন দিনে কতবার তিনি ধূমপান করেন। কিন্তু প্রত্যক্ষ ধূমপানই ক্যান্সারের শেষ কথা নয়। অনেক সময় পরোক্ষ ধূমপান থেকেও কিন্তু আপনার শরীরে থাবা বসাতে পারে ক্যান্সার।

পরোক্ষ ধূমপান কি? পরোক্ষ ধূমপান হলো, যখন আপনি নিজে ধূমপান করছেন না অথচ আপনার সামনেই অন্য কোনও ব্যক্তি ধূমপান করছেন। আর সেই ধোঁয়া আপনার নাকের মাধ্যমে গিয়ে প্রবেশ করছে আপনার ফুসফুসে। আর এর ফলাফল হিসেবে শরীরে দেখা দিচ্ছে নানা রোগ। আজ আমরা এই পরোক্ষ ধূমপানের ফলে কি কি রোগ হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করবো।

এক একবার ধূমপান করার ফলে বদ্ধ ঘরে যে পরিমান ধোয়ার সৃষ্টি হয় তা খুবই দ্রুত গতিতে ঠান্ডা হয়ে যায় এবং আমরা সবাই জানি ধোঁয়া ঠান্ডা হওয়ার ফলে তা মাটির কাছাকাছি অবস্থান করে এবং ঘরে উপস্থিত মানুষজন বাধ্য হন সেই ধোঁয়া গ্রহণ করতে। এক একবার ধূমপানের ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ার মধ্যে উপস্থিত থাকে প্রায় ৭০০০ রাসায়নিক, যা সূক্ষ্ম কণা বা গ্যাসের আকারে থাকে যার মধ্যে ৭০ টি রাসায়নিক ক্যান্সার ঘটানোর জন্য দায়ী বলে প্রমাণিত হয়েছে।

ধূমপানের ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ায় থাকা অ্যামোনিয়া যথারীতি চোখে জ্বালা অনুভূতি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক জ্বালা এমনকি বুকে এক জ্বালার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় ধূমপানের ফলে বিকলাঙ্গ সন্তান জন্মানোর যে আশঙ্কা থাকে পরোক্ষ ধুমপানের ক্ষেত্রেও সেই একই বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। পরোক্ষ ধূমপানের ফলে শিশুদের অস্বাভাবিক মৃত্যুও ঘটতে পারে। দীর্ঘদিন পরোক্ষ ধূমপানের মধ্যে থাকার ফলে হার্টের রোগ এবং স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা ধূমপান করেন না তাদের করোনারি আর্টারি ডিজিজ হওয়ার চান্স বেশি হয়, ধূমপায়ীদের তুলনায়। পরোক্ষ ধূমপানের ফলে রক্ত অত্যন্ত আঠালো প্রকৃতির হয়ে যায় এবং সেই রক্ত খুব তাড়াতড়ি জমাট বাঁধতে পারে। তাই পরোক্ষ ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গবেষণায় প্রমাণিত, পরোক্ষ ধূমপান করা মানুষদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ লোক ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন।

তাই যতটা সম্ভব নিজের ঘরকে ধোঁয়া মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। ঘরে যদি কোনও শিশু থাকে তাহলে কখনোই তার সামনে ধূমপান করবেন না তা ঘরের দরজা জানলা যতই খোলা থাক না কেন। বাড়িতে ঘুরতে আসা অতিথিদেরও অনুরোধ করুন বাইরে থেকে ধূমপান করার পরই যেন তারা ঘরে প্রবেশ করে। কোনও বদ্ধ জায়গায় ধূমপান করবেন না। বিশেষ করে এমন কোনও জায়গায় ধূমপান করবেন না, যেখানে ধূমপান করেন না এমন মানুষ উপস্থিত রয়েছেন। আর পারলে ধূমপান করা ছেড়েই দিন। কি লাভ বলুন? ছোট্ট একটা জীবন, তাকে ধূমপান করে নষ্ট নাই বা করলেন..... 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...