প্রতিদিন সন্ধ্যে নামলেই মনটা কিরকম যেন 'চা' 'চা' করে। আর তার সাথে যদি বিস্কুট বা পকোড়া পাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। হ্যাঁ, এই কথাটি আমি, আপনি এবং আমরা সবাই মাঝেমধ্যেই বলে থাকি। কিন্তু আমাদের মধ্যেই এমন অনেক লোকজন আছেন যারা চা পান করতে খুবই ভালোবাসেন। বলা ভালো, তাদের চায়ের প্রতি একটি নেশা তৈরী হয়ে যায়। ঘন্টায় ঘন্টায় তারা চায়ের অর্ডার দিতে থাকে। তারা কিন্তু বুঝতে পারছেন না অতিরিক্ত চা পান করে শরীরের কোন বিপদটি তারা ডেকে আনছেন। তা আপনি জানেন তো? আর না জানলেও অসুবিধা নেই। আজ আমরা এই টপিকটিতেই আলোচনা করবো যে অতিরিক্ত চা পান করলে কি কি বিপদ হতে পারে।
চা বা কফি -ভালো পানীয় কোনোটিই নয়। ক্লান্তি দূর করে শারীরিক ক্ষমতা ফেরানোর দক্ষতাও রাখে চা বা কফি। চা বা কফিতে থাকে ক্যাফেন যা শারীরিক, মানসিক ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়াও ক্যাফেন শরীরের মেটাবলিসম বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তবে এই উপকারগুলি তাদের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে যারা চা বা কফি একটি নির্দিষ্ট মাত্রা রেখে পান করেন। অত্যধিক পরিমানে এগুলি পান করলে হতে পারে আপনার কোনো এফেক্টই হলো না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে যে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তা হয়ত আপনি হয়তো বুঝতেও পারছেন না। তাহলে চলুন অত্যধিক ক্যাফেন শরীরে প্রবেশের ফলে কি কি হতে পারে জানা যাক।
১) উদ্বেগ বৃদ্ধি- চা বা কফি জাতীয় পানীয় মানসিক সতর্কতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় অ্যাডিনোসিন নামক একটি ব্রেন হরমোনের কার্যকারিতা হ্রাস করে যা বিপরীতে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণের পরিমান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কিন্তু যতদিন একজন মানুষ একটি নির্দিষ্ট পরিমান চা বা কফি পান করবেন ততদিনই সেই মানুষ এই সুবিধাগুলি পাবেন। যেই নির্দিষ্ট পরিমান টি পেরিয়ে যাবেন, তখনই নানা মানসিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করবে। অল্পতেই ভয় পাওয়া, কনফিউজ হয়ে যাওয়া, উদ্বেগ প্রভৃতির বৃদ্ধি ঘটায়।
২) অনিদ্রা- রাত জেগে পড়াশোনা করার জন্য অনেকেই চা বা কফির উপর ভরসা রেখে থাকেন। কিন্তু এটা জানা আছে কি? অতিরিক্ত চা বা কফি পান করলে পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম হওয়া থেকে বিরত থেকে যায় শরীর। দেখা গেছে, সাধারণত একটি মানুষের ঘুম আসতে যতটা সময় লাগে তার থেকে অনেক বেশি সময় লাগে চা বা কফি পান করার পরে। দিনের শেষের দিকে চা বা কফি পান করার ফলে সেই পানীয়ের এফেক্ট কমতে অনেকটা বেশি সময় লেগে যায়। তাই রাতে ঘুমানোর আগে চা বা কফি পান না করে ঘুমানোর অনেকক্ষন আগে পান করলেও ঘুম না আসার সমস্যা থেকে যায়।
৩) মাসল ব্রেকডাউন- এমন একটি রোগ যাতে ড্যামেজ মাসল ফাইবার রক্ত প্রবাহের মধ্যে ঢুকে পড়ে যার থেকে পরবর্তীকালে কিডনির সমস্যা এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এই মাসল ব্রেকডাউন সাধারণত বিষাক্ত পোকামাকড় বা সাপের কামড়ের ফলে হয়ে থাকে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, অত্যধিক ক্যাফেন জাতীয় কেমিক্যাল শরীরে প্রবেশের ফলেও এই মাসল ব্রেকডাউন হতে পারে।
৪) উচ্চ রক্তচাপ- এমনিতেই চা বা কফি রক্তচাপের বা হৃৎপিণ্ডের উপর কোনোপ্রভাব বিস্তার না করলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে এই পানীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর এক উদ্দীপক প্রভাব বিস্তার করে যা পরোক্ষভাবে রক্তচাপের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় এবং হৃৎপিন্ডে ও মস্তিষ্কে রক্ত সংবহনে বাধা দেয়।
৫) দ্রুত হার্ট রেট- ক্যাফেনের উদ্দীপক প্রভাবের ফলে এই হৃদপিণ্ডের উপর এক প্রভাব বিস্তার করে যার ফলে হৃদয় তার স্বাভাবিক ছন্দের থেকে বেশি মাত্রায় কাঁপতে থাকে। দীর্ঘদিন এইভাবে চলতে থাকলে একসময় সেই ব্যক্তির হার্ট বিট করার প্যাটার্নেও পরিবর্তন আসতে পারে।
তাহলে জানলেন সারাদিনে অতিরিক্ত চা বা কফি পান করলে শরীরের কি কি ক্ষতি হতে পারে। তাই, এবার থেকে অতিরিক্ত পরিমান চা কফি পান করার আগে মনে করে নেবেন এই ক্ষতিকর এফেক্টগুলির কথা। একটি নির্দিষ্ট পরিমান চা বা কফি পান করলে তা শরীরের উপকারই করে। কিন্তু মনে রাখা দরকার মাত্রাতিরিক্ত সবকিছুই শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।