মাঝপথে অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করার ফল

 

ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে জ্বর সর্দিকাশি প্রতি ঘরের গল্প। এই সময় প্রতি ঘরে ঘরেই এই একটি সমস্যা দেখা যায়। বড়দের থেকে শিশুরা এই সময় বেশি অসুস্থ হয়ে থাকে। আর জ্বর মূলত দুটি কারণে হয়ে থাকে। একটি হতে পারে ভাইরাসঘটিত কারণে এবং অপরটি হতে পারে ব্যাকটেরিয়া ঘটিত কারণে। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত জ্বর সর্দিকাশির ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা অ্যান্টিবায়োটিক খেতে দিয়ে থাকেন। অ্যান্টিবায়োটিক কিছুক্ষেত্রে শরীরে কিছু উল্টো বিক্রিয়ার সৃষ্টি করে থাকে। সেইসব ক্ষেত্রে আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই সেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিই। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক হঠাৎ বন্ধ করে দিলে তার ফল কি হতে পারে তা কি জানা আছে? চলুন আজ সেটাই জেনে নিই....................

এর জন্য আমাদের প্রথমেই যেটা জানতে হবে সেটা হলো অ্যান্টিবায়োটিক কিভাবে তৈরী হয়? অ্যান্টিবায়োটিক মূলত আণুবীক্ষণিক মাইক্রোবদের শরীর থেকে নিঃসৃত হওয়া একধরণের তরল বিশেষ। যা তারা নিজেদের প্রোটেক্ট করার জন্য নিঃসরণ করে থাকে। এই বিশেষ ধরণের তরল দিয়েই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ তৈরী করা হয়। এইভাবে তৈরী ওষুধকে সাধারণত অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল মেডিসিন বলা হয়ে থাকে। এর অধীনেই অ্যান্টিবায়োটিক থেকে শুরু করে অ্যান্টি ভাইরাল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল সব যায়।

প্রতি অ্যান্টিবায়োটিকের একটি নিজস্ব ডোজ থাকে। চিকিৎসকেরা সেই ডোজ মেনেই ওষুধটি খেতে বলে থাকে। বলা হয়, সেই ডোজ সম্পূর্ণ না করলে সেই ওষুধ কাজ করে না। কিন্তু শরীরে কোনো রিঅ্যাকশন দেখলে আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি না। নিজেদের ইচ্ছে মতোই সেই ওষুধ বন্ধ করে দিয়ে থাকি। এর ফলে কি হয়?  শরীরে যে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে তারা সাধারণত খুব তাড়াতাড়ি বংশবৃদ্ধি করে থাকে। আর অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কাজ হয় সেই ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলা অথবা সেই ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি রোধ করে দেওয়ামাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দিলে কিছু ক্ষেত্রে কিছু ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকে। আর যারা বেঁচে থাকে তারা ভবিষ্যতে এই ওষুধের বিরুদ্ধে নিজেদের শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। তখন পরবর্তীকালে সেই ওষুধ আর কাজ করেনা। অনেকসময় দেখা যায় কোনো মানুষের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। সেটা এই কারণের ফলে হতে পারে।

অনেকেই প্রশ্ন করেন ওষুধ একবার বন্ধ করে আবার সেই ওষুধ চালু করা যায় কিনা। সেই ক্ষেত্রে পরবর্তী ব্যাকটেরিয়ার চরিত্রের উপর সেই ওষুধ খাওয়া যাবে কিনা তা ঠিক হয়। কারণ রোগের ধরণ যদি এক হয় বা পুরোনো ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা যদি শরীর রোগাক্রান্ত হয় তাহলে একই ওষুধ কাজ দিতে পারে। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া যদি আলাদা হয় তাহলে সেই ওষুধ কোনো কাজ দেবে না। তাই চিকিৎসকেরা বলেন অ্যান্টিবায়োটিক কখনো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নেওয়া উচিত নয়। বর্তমানে সমস্ত ওষুধের দোকানেই এই নিয়ম করা হয়েছে যাতে প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেউ অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি না করে।

কখনো কখনো একটি রোগের কারণে একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসক প্রেস্ক্রাইব করে থাকেন। অনেকে ভাবেন দুই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে কি লাভ? যেকোনো একটা খেলেই তো হলো? না, যেকোনো একটি খেলেই যদি হতো তাহলে চিকিৎসক একটিই দিতেন। আসলে, নানা ধরণের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য আলাদা আলাদা প্রকারের অ্যান্টিবায়োটিক তৈরী হয়। আর কখনো কোনো মানুষ যদি একসাথে দুইধরনের ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সংক্রমিত হন তাহলে দুইধরনের অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতেই পারে। চিকিৎসকেরা রোগ সম্পর্কে আমার বা আপনার থেকে ভালো জানেন তাই দোকান থেকে ভুল ওষুধ কিনে কখনোও খাবেন না। হতে পারে তৎক্ষণাৎ সেই ওষুধ আপনার উপর খুব ভালো এফেক্ট করলো কিন্তু সুদূর ভবিষ্যতে সেই ওষুধের কি ফল হবে শরীরে তা জানতেও পারবেন না।  

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...