ডুমুরের ফুল 'কেউকেটা' অতিথি

যে সে নয় সে, পৃথিবীর সঙ্গে তার সম্পর্ক বহু প্রাচীন। ভাগ্যক্রমে মানুষ একজীবনে হয়ত একটিবারের জন্য দেখা পান পৃথিবীর এই 'কেউকেটা' অতিথির। অনেক দূরে বাস তার, একরাশ আলোর ছটা নিয়ে ৭৫/৭৬ বছর অন্তর অন্তর পৃথিবী ঘুরতে বেরোয় সে। তার মতো অনেকে থাকলেও সে 'বিশেষ' এবং 'বিখ্যাত' নাম তার 'হ্যালির ধূমকেতু', জ্যোতির্বিজ্ঞান নাম '১পি/হ্যালি'

hally-1

কিছুটা ভিন্নমত থাকলেও হ্যালির ধূমকেতুকেই সবচেয়ে বিখ্যাত ধূমকেতুর আখ্যা দেওয়া হয়। এটি একটি পর্যাবৃত্ত(Periodic) ধূমকেতু অর্থাৎ যা নির্দিষ্ট সময় পরপর ফিরে আসে। তাকে শেষবার পৃথিবী ঘুরতে দেখা গিয়েছিল ১৯৮৬ সালে, আনুমানিক ২০৬১ সালে ফের দর্শন দিতে পারে সে।

hally-2

ধূমকেতু হল ধুলো, বরফ গ্যাসের তৈরি এক ধরনের কমা লেজবিশিষ্ট মহাজাগতিক নিউক্লিয়াস এই নিউক্লিয়াস চওড়ায় ১০০ মিটার থেকে ৪০ কি.মি. পর্যন্ত হতে পারে, তা সৌরজগতের ভেতরে ঢুকে পড়লে সূর্যের বিকিরণে তার উদ্বায়ী পদার্থগুলো ধূলো গ্যাস হয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এর ফলে যে বায়ুমণ্ডল তৈরী হয় তাকে বলে 'কমা' সূর্যের বিকিরণ বল সৌরবায়ুর প্রভাবে কমার ওপর যে বল প্রযুক্ত হয় তাতে সূর্যাবিমূখি একটি বিশাল 'লেজ' তৈরি হয়। কমা লেজে যেসব অতিক্ষুদ্র উপাদান থাকে সেগুলো নিউক্লিয়াস থেকে বেরিয়ে আসা উপাদান যা সূর্যের আলোয় অত্যুজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং আমরা তা খালি চোখে দেখতে পাই। তবে সব ধূমকেতু আমরা দেখতে পাই না, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা অনুজ্জ্বল হয় বলে দূরবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না।

hally-comet

(হ্যালির ধূমকেতুর আছড়ে পড়া অংশবিশেষ)

বিজ্ঞানীরা মনে করেন একশো কোটিরও বেশি ধুমকেতু রয়েছে আমাদের সৌরজগতে। তবে পর্যন্ত মোট ৫৩৮৪ টি ধূমকেতুর দেখা মিলেছে। তবে যাঁদের কাজ সারাক্ষণ বৃহৎ জ্যোতির্মণ্ডলে নজর রাখার অর্থাৎ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কিন্তু শুধুমাত্র ধূমকেতুর হিসেব নিকেশ করেই থেমে থাকলেন না, তাঁরা ঢুকলেন আরও গভীরে, বোঝার চেষ্টা করলেন ধূমকেতুর আকার-ধরণ -বৈশিষ্ট্য। ঠিক সেভাবেই ক্যাসিনি প্রথম ধারণা করেন যে ১৫৭৭, ১৬৬৫, ১৬৮০ সালে যে ধূমকেতু দেখা গিয়েছিল, তারা আলাদা নয়, সম্ভবত একই। তার এই অসমাপ্ত ধারণা কাজে লাগিয়ে ১৩৩৭ সাল থেকে ১৬৯৮ সাল পর্যন্ত ২৪টি ধূমকেতুর তথ্য সংগ্রহ করেন জ্যোতির্বিদ এডমন্ড হ্যালি(Edmond halley) তিনি দেখান যে ১৫৩১, ১৬০৭, ১৬৮২ সালে দেখা যাওয়া ধূমকেতুর ভেতরে অনেক মিল। হ্যালী ধূমকেতুর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার ধরে হিসাব করেন এবং ১৭০৫ সালে A Synopsis of the Astronomy of Comets বলেন যে ধূমকেতুটি ১৭৫৯ সালের শেষে আবার দেখা যাবে। পরবর্তীতে Alexis Clairaut, Joseph Lalande এবং Nicole-Reine Lepaute এই তিনজন ফরাসি গণিতবিদের একটি দল তাঁর হিসাব কিছুটা সংস্কার করেন এবং প্রমাণিত হয় হ্যালীর হিসাব সম্পূর্ণ সঠিক। হ্যালী' ভবিষ্যদ্বাণী করা ধূমকেতুটি আবারও দেখা যায় ১৭৫৯ সালের ২৪ এপ্রিলে। ধূমকেতুটি বিশেষ বিখ্যাত হয়ে ওঠে 'হ্যালির ধূমকেতু' নামে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...