প্লাস্টিকের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে সবাই অবগত। প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিবেশ দূষণ হচ্ছেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমতে দেখা যায় না বিশ্বজুড়ে। হয়তো তার একটা কারণ হতে পারে যে প্লাস্টিকের বিকল্প কিছু পাওয়া যায় না। প্লাস্টিক সহজাত ভাবে বিষাক্ত বা ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু নানা ধরনের জৈব বা অজৈব অ্যাডিটিভ ব্যবহার করে প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরি করা হয়।
এই সব অ্যাডিটিভের মধ্যে আছে কালার্যান্ট ও পিগমেন্ট, প্লাস্টিসাইজার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, স্টেবিলাইজার এবং ধাতু। কালার্যান্ট বা পিগমেন্ট জাতীয় পদার্থগুলি শিল্পজাত অ্যাজোডাইস। এর মধ্যে বেশ কিছু পদার্থ হল কারসিনোজেনিক বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী এবং এতে খাদ্যদ্রব্য বহন করা হলে তাতে মিশে যাওয়ার খুবই আশঙ্কা থাকে। প্লাস্টিকদ্রব্য বানানোর সময় ক্যাডমিয়াম বা সিসার মতো যে বিষাক্ত ধাতু মেশানো হয় তা-ও গলে গিয়ে খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিকের পাত্র, কাটলারি ব্যবহারে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। প্লাস্টিকের কনটেইনারে খাবার রাখা ক্ষতিকর। জীবনধারাবিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাই-এর স্বাস্থ্য বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন।
তবে এটা বোধহয় অনেকেই জানেন না যে আমাদের ভারতের মাটিতেই তৈরী করা হয়েছে এডিবল কাটলারি। আপনারও অবাক লাগছে তো শুনতে? ঠিকই দেখছেন। হায়দ্রাবাদে বসবাসকারী নারায়ানা পিসাপাথি, প্রথম আবিষ্কার করেন এই ভোজ্য কাটলারি সেট যা একবার ব্যবহারের পরেই ফেলে দেওয়া যায়। এটি তৈরী হয় জোয়ার দিয়ে, তার সাথে মেশানো হয় চাল ও গম। এই চামচগুলি সম্পূর্ণ জীবাণুবিয়োজ্য। এতে কোন রকম প্রিসার্ভেটিভ ব্যবহার করা হয় না, ডিহাইড্রেটেড ভেজিটেবল ব্যবহৃত হয়। এই প্রোডাক্টগুলি তিন বছর ধরে ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি গরম কোন জিনিস খাওয়াও যেতে পারে এই চামচ দিয়ে। ব্যবহার শেষে কেউ এটি খেয়ে নিতেও পারে আবার তা না চাইলে ফেলে দিতেও পারে। চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে এটি মাটিতে মিশে যায় সহজেই।
তাঁর কোম্পানি বেকি-র এই এডিবল কাটলারি অনেক ফ্লেভারের হয়ে থাকে যেমন- চিনি, আদা -দারচিনি, আদা-রসুন, জিরে, গোলমরিচ, আদা-পুদিনা, গাজর-বীট ইত্যাদি। এর আবিষ্কর্তা তাঁর ছোট্ট ফ্ল্যাটেই শুরু করেন তাঁর ব্যবসা। অনেক পরিকল্পনার পর তিনি ঠিক করেছিলেন যে তিনি সরাসরি যোগাযোগ করবেন চাষীদের সঙ্গেই এবং তাদের তিনি এই পরিকল্পনার কথা বলেন, তাদের উৎসাহিত করেন এই কাজে। অনেকে যুক্তও হয় এবং তাঁর এই উদ্যোগ ক্রমশ সফল হতে থাকে। দু মিলিয়নেরও বেশি ব্রিক্রি হয়ে গেছে এই চামচ ইতিমধ্যেই। অর্থাৎ এই কাটলারি হল একাধারে যেমন টেস্টি, পুষ্টিকর আবার অন্যদিকে তেমনি পরিবেশ-বান্ধবও। বর্তমানে অনলাইনেও দিব্যি চলছে এর ব্যবসা। চামচ তাও আবার ফ্লেভারড! এর থেকে ভালো কিছু আর সত্যিই হয় না। এটি পরিবেশ দূষণ কমাতেও যথেষ্ট সহায়ক।