নতুন করে চিকিৎসকদের ভাবনায় ফেলেছে একটি রোগ। যা হলো ইবোলা ভাইরাসঘটিত জ্বর যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইবোলা হেমোরেজিক ফিভার নামে পরিচিত।এই রোগটির প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে ১৯৭৬ সালে আফ্রিকাতে।সেই সময় প্রায় মহামারীর আকার নেয় এই রোগ।আগের বেশি শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছে এই ভাইরাসগুলি।বুধবার জেনেরায় ইবোলা মোকাবিলা সংক্রান্ত একটি বৈঠকে এই রোগকে 'আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংকট' বলে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।জানা গেছে, ইতিমধ্যে কঙ্গোয় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে ২০ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই রোগ সংক্রান্ত কিছু তথ্য.....................
এই ভাইরাস শরীরে বাসা বাঁধার সঙ্গে সঙ্গেই রোগলক্ষণ প্রকাশ করে না। এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় ভাইরাস আক্রমণের দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর।প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে যা দেখা দেয় তা হলো, জ্বর, গলা ব্যথা, পেশির ব্যথা, মাথা ধরা প্রভৃতি।সূত্রপাতে এই লক্ষণগুলি প্রকাশ পেলেও রোগ বাড়ার সাথে সাথে গা গোলানো, বমি, ডায়ারিয়া এবং সবশেষে রক্তপাতজনিত সমস্যা দেখা যায়। জানা গেছে, এই রোগ সংক্রামিত হয় বানর বা বাদুড়জাতীয় ফলাহারী প্রাণীর থেকে। কোনো প্রাণী আগে থেকে সংক্রমণের শিকার হয়ে থাকলে তাদের থেকে এই রোগ প্রবেশ করতে পারে মানবদেহে।সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে এই রোগ থেকে পরবর্তীকালে লিভার ও কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করে। এই রোগের কোনো প্রপার ট্রিটমেন্ট নেই। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপির সাহায্য নিতে হতে পারে। অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির পর্যায়ে ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইডও দিতে হতে পারে। বলা হয়, বাদুড়ের থেকে এই রোগ মানব শরীরে প্রবেশ করলেও বাদুড় নিজে এই রোগে আক্রান্ত হয় না। শুধুমাত্র রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে বাদুড়। মানব শরীরে একবার এই রোগের সংক্রমণ ঘটলে তার খুব তাড়াতাড়ি স্প্রেড করতে শুরু করে। জানা গেছে, জীবিত পুরুষের বীর্যের সাহায্যে এই রোগ দুইমাস পর্যন্ত পরিবাহিত হতে পারে। কিছু প্রাণীর রক্তে প্রথম থেকেই থাকে এই ভাইরাস।শুধুমাত্র আক্রান্ত মানুষের শরীর থেকে নিঃসৃত তরলের মাধ্যমে বাহিত হয় এই রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, মলমূত্র, বমি, প্রভৃতির মাধ্যমে এই রোগ এক মানুষের শরীর থেকে অন্য মানুষের শরীরে পরিবাহিত হয়ে থাকে।
এই রোগ শনাক্ত করা বেশ কঠিন। সাধারণ ম্যালেরিয়া এবং কলেরার মতো লক্ষণ প্রকাশ করার কারণে প্রাথমিকভাবে এই রোগকে ম্যালেরিয়া বা কলেরা বলে মনে করা হয়।এই রোগের সঠিক শনাক্তকরণের জন্য রক্ত এবং রক্তকলা পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তিদের সংস্পর্শ থেকে সরিয়ে রাখা হয়।এই রোগ খুব দ্রুতগতিতে এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে পরিবাহিত হয় যা আগেও বলা হয়েছে। যদিও এই রোগের কোনো প্রপার কোনো ট্রিটমেন্ট নেই কিন্তু গবেষকরা আজও এই রোগ নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন।এই রোগের জন্য ২০১৭ সালে ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে।এছাড়াও এই রোগের ট্রিটমেন্ট হিসেবে ফ্লুইড এবং ইলেক্ট্রোলাইটসের উপরেই ভরসা রাখতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।এর সাথে সাইড এফেক্ট থেকে বাঁচার জন্য ব্লাড প্রেসারের ওষুধ, অক্সিজেন এইসবের উপর হয়। রোগ বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেলে ব্লাড ট্রান্সফিউশন করার প্রয়োজন পড়ে।
এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য যেইসব জায়গায় ইতিমধ্যেই খোঁজ মিলেছে এই ভাইরাসের সেইসব জায়গা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।এই রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে শিম্পাঞ্জি থেকে শুরু করে নানা প্রজাতির বানর এবং কলাবাদুড়। এইসব প্রাণীর থেকে যত দূরে থাকা যায় তত ভালো।স্বাস্থ্য শিবির বা হাসপাতালে যেসব মানুষ সারাদিন এই রোগে আক্রান্ত মানুষদের হ্যান্ডেল করে থাকেন তাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য গ্লাভস, মাস্ক এবং চশমার ব্যবহার করা উচিত।যে ব্যক্তি ইতিমধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সুস্থ মানুষের সংস্পর্শ থেকে কয়েকদিনের জন্য সরিয়ে রাখা উচিৎ।জানা গেছে, এই রোগের জন্য আবিষ্কৃত টিকা ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে ১ লক্ষ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষকে। সবক্ষেত্রেই এই ভ্যাকসিন কার্যকরী হয়েছে বলেই জানা গেছে।