তার তুলনা সে নিজেই। গঙ্গা’র হোক অথবা পদ্মা’র, মৎস্যপ্রিয় বাঙালির আবেগের অন্য নাম ‘ইলিশ’। কিন্তু বর্ষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে প্রায় অদৃশ্য পরিপুষ্ট রুপালি ইলিশ, বদলে বাজার দখল করছে খোকা ইলিশ। শুধু এ বছর নয়, এ দৃশ্যের দেখা মিলছে গত কয়েক বছর ধরেই। এ যেন দুধের স্বাদ মেটানো ঘোল দিয়ে। এবার খোকা ইলিশের বাজার রুখতে ‘হিডকো’র তরফে নেওয়া হয়েছে নয়া উদ্যোগ।
বড় ইলিশ না পেয়ে, বাজারে খোকা ইলিশের চাহিদা বিপুল। এই চাহিদাই ডেকে এনেছে বিপত্তি। দিনের পর দিন খোকা ইলিশের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, তার জোগান দিতে হচ্ছে জেলেদের। এর ফলে মাছগুলি সম্পূর্ণ বিকাশ পাচ্ছে না, তার আগেই বাজারে এসে পৌঁছচ্ছে।
ঘটনার জেরে এ বিষয়ে বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে হিডকো। শনিবার থেকে হিডকোর পক্ষ থেকে খোকা ইলিশ খাওয়ার বিরূদ্ধে ‘ক্যাম্পেইন’ করা হবে। যাতে মানুষ খোকা ইলিশ খাওয়া বন্ধ করে, সে জন্য আবেদন জানানো হবে। এ ছাড়াও, ‘ইট লার্জ, সেভ স্মল’ স্লোগান’কে কেন্দ্র করে আধিকারিকদের পক্ষ থেকে র্যালি সহ সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন ও একটি ইলিশ উৎসব আয়োজন করা হবে নিউটাউনে।
“বর্তমানে ইলিশের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই জালবন্দী করার ফলে পূর্ণবয়স্ক ইলিশের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। আমরা সকলকে বার্তা দিতে চাইছি যে, পূর্ণবিকশিত হলে ইলিশ আরও সুস্বাদু হবে। এমনকি এটার ৬০ দিনের একটি প্রক্রিয়া আছে—১৫ই এপ্রিল থেকে ১৪ই জুন—সে সময় হুগলি নদী হয়ে তারা ডিম প্রসব করতে আসে, তাদের বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে সে সময় ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে,” জানাচ্ছেন এক আধিকারিক।
একটি পূর্ণবিকশিত ইলিশের ওজন প্রায় ২.৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে এবং তা হতে অন্ততপক্ষে ২ বছর সময় লাগে। সেক্ষেত্রে মাছগুলির আয়ু গড়ে ৪ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, পূর্ণবিকশিত হওয়ার পথে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে। ক্রেতাদের চাহিদার জোগান দিতে বছরের পর বছর ধরে ভারত ও বাংলাদেশের জেলেরা নির্দয়ভাবে খোকা ইলিশ ধরে চলেছেন, ফলে বাজারে দেদারে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ গ্রাম থেকে ১.৫ কেজি ওজনের খোকা ইলিশ।
এ অবস্থায়, খোকা ইলিশ খাওয়া বন্ধ করতে, হিডকো কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ইলিশ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। ইকো পার্কের ‘ক্যাফে একান্তে’ ও বিশ্ব বাংলার ‘ঝুলন্ত রেস্তোরাঁ’য় উৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে কেবল বড় ইলিশ পরিবেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
শনিবার সন্ধ্যায় ইকোপার্কের ‘বাংলার গ্রাম’-এ একটি র্যালি আয়োজন করার পরিকল্পনাও রয়েছে। উপস্থিত দর্শকদের জন্য থাকবে পূর্ণবয়স্ক ইলিশের প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর পর প্রদর্শিত মাছগুলি ‘ক্যাফে একান্তে’-তে নিয়ে গিয়ে রান্না করা হবে। রন্ধিত পদগুলি সেখানে প্রদর্শিত হওয়ার পর সেগুলি সরাসরি পৌঁছে যাবে ক্যাফে একান্তে ও কোলকাতা গেট রেস্তোরাঁর ডিনার মেনুতে। ফলে, মাছগুলি প্রত্যক্ষ করার পাশাপাশি এর স্বাদআস্বাদন করারও সুযোগ পাবেন মৎস্যপ্রিয় মানুষ।
একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, “রেস্তোরাঁর টেবিলগুলিতে একটি করে কার্ড থাকবে যাতে লেখা থাকবে, ‘আমরা অনুরোধ করছি ছোট ইলিশ কিনবেন না।‘ মূলত নাগরিকদের এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা।
যেখানে জ্ঞানশূন্য হয়ে মানুষ ‘খোকা ইলিশ’-এর আশায় থলি নিয়ে বাজারে বেড়িয়ে পড়ছেন, সেখানে কিছু সচেতন মানুষ মনে করছেন, একটি ইলিশ একটি ফলের সমান। খাওয়ার আগে তা যথেষ্ট পরিপক্ক হওয়া প্রয়োজন।