আচ্ছা, আপনি-আমি এই মুহূর্তে কিসের জন্য দিন গুনছি বলুন তো? আসলে চারদিকে এত সমস্যা, আমরা হয়ত ঠিকঠাক কোনো ব্যাপারে আশা করতেও ভুলে গেছি। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমি বলব, বর্ষার যেমন দেখা নেই, সেই সুযোগে কিছু কাজ কিন্তু এগিয়ে চলেছে নিজস্ব গতিতে এবং আমাদের আশার বাণী শোনানোর জন্য উৎসুক হয়ে আছে।
এখনও বুঝতে পারলেন না তো, ঠিক আছে, খোলসা করে বলাই যাক। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো আমাদের নিয়ে সওয়ার হয়ে শহরের বুকে ছুটে চলার জন্য প্রায় প্রস্তুত। রেকের পরীক্ষা- নিরীক্ষা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে, তা সঠিকভাবে চালানোর জন্য কিছু অনুমতির প্রয়োজন, যা নেবার জন্য প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। অপরদিকে কিন্তু স্টেশন চত্ত্বর থেকে লিফট, কার পার্কিং, শৌচাগার প্রভৃতি যা যা প্ৰয়োজন, তা একটু একটু করে প্রায় তৈরি।
প্রথম দফায় যে ছ'টি স্টেশনের মধ্যে ট্রেন চলার কথা, তা হল- সেক্টর-৫, সেন্ট্রাল পার্ক, সিটি সেন্টার, বেঙ্গল কেমিক্যাল এবং সল্টলেক স্টেডিয়াম। এই স্টেশনগুলি কিন্তু একেবারে তৈরী। যাকে বলে 'রেডি-স্টেডি'। শুধু 'গো' বলার অপেক্ষায় আছে এই ক'টি স্টেশন। ডিসপ্লে বোর্ডে লেখা ভেসে উঠছে যেমন হওয়া প্রয়োজন, প্রত্যেকটি স্টেশনে বসে গিয়েছে ঘড়ি, বুকিং উইন্ডোতে চলে এসেছে চেয়ার, স্টেশন ম্যানেজারের ঘরে এসে গেছে ডেস্কটপ-যা প্রতিটি কাজে লাগবে। কনকোর্স লেভেল থেকে টিকেটিং এরিয়ায় ঢোকার পথে যে গেটগুলো বসানো আছে, সেই গেটের সামনে বসে গিয়েছে লাগেজ স্ক্যানার। স্টেশনে ঢোকার মুখে সুন্দর সুন্দর গ্রাফিতি আঁকার কাজও শেষ।
বর্তমান মেট্রোতে শারীরিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের কথা মাথায় রেখে কোনোরকম আলাদা ব্যবস্থা করা হয়নি। সেই সময় কোনো কারনে হয়ত এই ব্যাপারটি মাথায় আসেনি তৎকালীন মেট্রো নির্মাণের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের। কিন্তু মেট্রো নিত্যদিন চলার পথে শিখিয়ে দিয়ে গেছে কোথায় আমাদের খামতি রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই এবারে সেই সমস্ত মানুষদের জন্য বিশেষভাবে তৈরী করা হয়েছে লিফট ও চলমান সিঁড়ি। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই যাত্রাপথে হাওড়া ময়দান থেকে ফুলবাগান পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ পথ এবং সল্টলেক স্টেডিয়াম থেকে সেক্টর-৫ পর্যন্ত এলিভেটেড স্টেশন। এলিভেটেড স্টেশনগুলোর উচ্চতা ৭ মিটার। স্টেশনে যাওয়ার জন্য থাকছে লিফট। কনকোর্স থেকে প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত যেতেও যাত্রীরা সিঁড়ির পাশাপাশি দু'টো লিফট পাবেন এবং ভূগর্ভস্থ স্টেশনগুলোতেও লিফট থাকছে।
একইভাবে বর্তমান মেট্রোতে শৌচাগারের অভাব একটা মস্ত সমস্যা। সেই সময় হয়ত ভাবনাটা এমন ছিল, যে এত তাড়াতাড়ি ট্রেন চলবে, এর মাঝখানে আবার শৌচাগার কেন প্রয়োজন? কিন্তু দিন এগিয়েছে, মেট্রোর পরিসর ও বিস্তৃত হয়েছে, অথচ সেই শৌচাগারের ভাবনা বাস্তবে রূপ পায়নি। কিছু স্টেশনে নতুনভাবে নির্মিত হলেও ভূগর্ভস্থ স্টেশনগুলোতে তার সুরাহা হয়নি। তাই যাত্রীদের কিন্তু যথেষ্ট অসুবিধায় পড়তে হয় মাঝে মাঝেই। এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। সেই কথা মাথায় রেখে এবারে প্রতি স্টেশনে পুরুষদের জন্য দু'টি করে এবং মহিলাদের জন্য তিনটি করে শৌচাগার বানানো হয়েছে।
বর্তমানে মেট্রো স্টেশনের সামনে গাড়ি পার্ক করার তেমন সুবিধে নেই। এই বিষয়েও এগিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। বেঙ্গল কেমিক্যাল স্টেশনটি বাদ দিলে বাকি যে অংশে মেট্রো রেল চালু হচ্ছে, তার পাঁচটা স্টেশনেই চার চাকা ও দু'চাকার গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে। হুইলচেয়ারে বসা কোনো যাত্রীর যাতে স্টেশনে পৌঁছতে কোনো অসুবিধে না হয়, তার জন্য ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর প্রতিটি স্টেশনেই র্যাম্প-এর ব্যবস্থা থাকছে। র্যাম্প-এর মাধ্যমে হুইলচেয়ারে করে খুব সহজেই বিশেষভাবে সক্ষমরা লিফটে চলে যেতে পারবেন এবং সেখান থেকে স্টেশনে পৌঁছতে পারবেন।
তাহলে আর কি? দিন গুনুন নির্ঝঞ্ঝাট মেট্রো সফরের জন্য।