তিনটি চাঁদ রয়েছে পৃথিবীর, মিলেছে প্রমাণ

আমাদের পরিচিত পৃথিবীর অতিপরিচিত সঙ্গী উপগ্রহ হল চাঁদ, যার আলোয় রাতের পৃথিবী এক মোহময়ী রূপ ধারণ করে। রাতের আকাশে চাঁদের লাস্য মানুষের নজর কেড়েছে আদিকাল থেকেই, তাকে ঘিরেই রচিত হয়েছে গল্প-উপন্যাস, কবিতার ছন্দের মাঝেই এক উজ্জ্বল চরিত্র সে। কিন্তু এই নির্দিষ্ট চরিত্রটি যদি আর অদ্বিতীয় না থাকে? চাঁদের মতোই আরো অনেক চরিত্র যদি থাকে বাস্তবে তবে ব্যাপারটা কেমন হতে পারে বলুন তো?

না এটা কোনো গল্পকথা নয়, হাঙ্গেরির জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সত্যিই প্রমান করেছেন অন্য দুটি চাঁদের অস্তিত্ব যারা চাঁদের মতোই নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে পৃথিবীকে, আর তা প্রকাশিত হয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর একটি প্রতিবেদনেমান্থলি নোটিশেস অব রয়্যাল অ্যাস্ট্রনমিক্যাল সোসাইটিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই দুটি চাঁদের মধ্যে একটির ছবি তাঁরা তুলতে সক্ষম হয়েছেন। সেই সময় ওই চাঁদটির দূরত্ব পৃথিবী থেকে আড়াই লক্ষ মাইল ছিল। তবে এই নিয়ে বহুকাল আগে ১৯৬১ সালে পোল্যান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোর্ডলিউয়েস্কি চাঁদ ছাড়াও চাঁদ সদৃশ অন্য উপগ্রহের উপস্থিতির কথা ঘোষণা করেছিলেন। এর পর চলেছে তাঁর এই মত নিয়ে দীর্ঘ তর্ক বিতর্ক।

জানা যাচ্ছে যে যাকে চাঁদ বলে মনে করা হচ্ছে তা হলো আসলে ঘন ধুলোর মেঘ যা নির্দিষ্ট সময়মত প্রদক্ষিণ করে চলেছে পৃথিবীকে। এটি কোর্ডলিউয়েস্কি মেঘ নাম পরিচিত। মূলত এটি পৃথিবী থেকে প্রায় চার লক্ষ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। এটি আকারে অনেক বড় হলেও যেহেতু সূক্ষ্ম ধূলিকণা দিয়ে তৈরী তাই এর ওজন তুলনায় কম। সূর্যের আলো এর তলদেশ থেকে প্রতিফলিত হয় বটে কিন্তু সেই বিচ্ছুরিত আলো এতটাই ক্ষীণ যে পৃথিবী থেকে তা আর দেখা সম্ভব হয় না। এই ডাস্ট ক্লাউড এর খোঁজ মহাকাশে অবস্থিত ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট এল ৪ ও এল ৫ এ পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীদের মতে যদিও এই ধূলিকণা বা ডাস্ট পার্টিকেল লক্ষাধিক বছর ধরে একই জায়গায় থাকে তবে এটি বছরের পর বছর ধরে একই ভাবে থাকে এমনটা নয়, পরিবর্তিত হতে থাকে এটি। এই সুক্ষ্ম ধুলিকণাগুলি ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে অবস্থিত মাধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্য সেখানে আটকে যায় তবে অনেকক্ষেত্রে এগুলো এই পয়েন্ট থেকে বেরিয়ে যেতেও সক্ষম হয়ে যায়। কিন্তু আবারও ওই একই মাধ্যাকর্ষণজনিত কারণে ধূলিকণা এসে জমে এবং এভাবেই চলতে থাকে এই প্রক্রিয়াটি।

বৈজ্ঞানিকরা এই কোর্ডলিউয়েস্কি মেঘ নিয়ে গবেষণাকালে প্রথমে একটি কম্পিউটার মডেল তৈরী করেন যার মাধ্যমে জানা যাবে এই মেঘের সৃষ্টি কিভাবে হয় ও এর থেকে বিচ্ছুরিত আলোকে শনাক্ত কিভাবে করা যায়। পরে ওই ডাস্ট পার্টিকেল থেকে প্রতিফলিত আলোকে নিয়েই বিস্তারে গবেষণার কথা ভাবেন, যেখান থেকে কোর্ডলিউয়েস্কি ক্লাউডের উপস্থিতির প্রমান পেতে সহজ হবে। একে বলা হয় পোলারাইজেশন। এখনো পর্যন্ত এই দুয়ের মধ্যে এল ৫ এ অবস্থিত কোর্ডলিউয়েস্কি ক্লাউডকে দেখা গেছে, অপরটির দেখাও খুব শীঘ্রই মিলবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা মনে করেন যে ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট-গুলির আবিষ্কার হয়ে গেলে পৃথিবী থেকে পাঠানো স্পেসক্রাফ্ট রক্ষা করতে অনেকটা সুবিধা হবে। তাছাড়াও এই পয়েন্টে থাকা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্য অনেক কম জ্বালানি ব্যবহার করেই স্পেসক্রাফ্টগুলি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে পারবে। এমনকি ২০২০ সাল নাগাদ জেমস ওয়েবস্পেস টেলিস্কোপকেও ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট এল ২-তে স্থাপন করার কথা ভাবছে বিজ্ঞানীরা। 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...