কেনা কাটার ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার নতুন পদক্ষেপ। খুব শীঘ্রই চালু হতে চলেছে ই-জেম ব্যবস্থা পুরসভায়। কেন্দ্রীয় সরকারের এক নির্দেশিকা অনুসারে জানা গিয়েছে, সমস্ত সরকারি পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকে একটি সরকারি ই-মার্কেটপ্লেস বা পোর্টালের মাধ্যমে সমস্ত প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হবে। আর ঠিক এই ব্যবস্থাকেই বলা হচ্ছে ই-জেম। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের কয়েকটি দপ্তরে এই বিশেষ ব্যবস্থা চালু হয়ে গিয়েছে। তবে রাজ্যের সব পুরসভাগুলির পাশাপাশি কলকাতাতেও এই নিয়ম চালু করা হবে। তার জন্য গত বুধবার পুরভবনে এই বিষয়ে বৈঠক হয়। এরপরে তাতে ঠিক হয়েছে, আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরসভার বিভিন্ন বিভাগ এবং আইটি বিভাগের বাছাই করা কর্মীদের এই ব্যবস্থায় কাজ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চালু করা হবে এই ব্যবস্থা।
এই বিষয়ে কলকাতা পুরসভা আরো জানায় যে, পুরসভার মুখ্য অডিটরের নেতৃত্বাধীনে বৈঠকটি করা হয়। সেখানে রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা একটি দৃশ্য-শ্রাব্য উপস্থাপনার মাধ্যমে এই নতুন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেন। এই দিনের বিশেষ বৈঠকে রাজ্যের অর্থ দপ্তরের দু’জন শীর্ষ আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন।তাছাড়া পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিক জানান, ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় বাজেটে এই পদ্ধতি দেশের সমস্ত সরকারি স্তরে চালু করার কথা ঘোষণা করা হয়। এরপরে প্রশাসনিক নানা ধাপ পেরিয়ে তা এখন পুরসভা স্তরে লাগু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই আধিকারিক জানান, পুরসভাকে নিয়মিত বিভিন্ন পণ্য কিনতে হয়। তার মধ্যে রয়েছে মোটর, পাম্প, বৈদ্যুতিক বাতি থেকে শুরু করে নিকাশির কাজে ব্যবহৃত কোটি কোটি টাকার মেশিন, জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের কমপ্যাক্টর ইত্যাদি। এসব কেনার জন্য পুরসভা সব সময় টেন্ডার ডাকত। গুণমান নির্দিষ্ট রেখে সর্বনিম্ন দামের পণ্য কেনা হতো। কেন্দ্রীয় সরকারের এই ই-মার্কেটপ্লেসেও ‘বিড’ এবং ‘টেন্ডার’-এর সুবিধা থাকবে। পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। যার ফলে সঠিক সময় সীমার মধ্যে পুরসভায় পৌঁছে যাবে প্রয়োজনীয় পণ্য। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সরকারি পণ্য কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি বা কাউকে ঘুরপথে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ মাঝেমাঝেই ওঠে। আর্থিক বছর শেষ হয়ে যাওয়ার পর অডিট হলে সামনে আসে নানা অসামঞ্জস্য। এই ব্যবস্থা পুরোপুরি ভাবে চালু হয়ে গেলে এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতি বা স্বজনপোষণের অভিযোগ এড়ানো যাবে। তাছাড়া বাজার দরের চেয়ে তুলনা মূলক কম দামে মিলবে এই পণ্য সামগ্রী। আশা করা হচ্ছে ১০ শতাংশ কম দামে তা পাওয়া যাবে। সরকারী কর্মকর্তাদের আশা, ক্রেতা এবং বিক্রেতার মাঝখানে মধ্যস্বত্ত্বভোগী না থাকায় আর্থিক সাশ্রয়ও হবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে। তবে এই ব্যবস্থাকে ঘিরে কিছুটা আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে পুরসভার শীর্ষমহলে। প্রতিদিনের জরুরি পরিষেবায় নানা ক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন পণ্য কিনতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বরাত পাওয়া সংস্থা পণ্য পৌঁছে দিলেও তার দাম মেটানো হয় তিন মাস, এমনকী এক বছর পরেও। আর এক্ষেত্রে টাকা মেটালে তবেই মিলবে পণ্য। ফলে জরুরি ভিত্তিতে কিছু কেনার দরকার পড়লে কী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে অফিসার মহল। আবার প্রয়োজনীয় পণ্য সরকারি পোর্টালে না মিললে তা বাইরে থেকেই কিনতে হবে। তবে কিছু আধিকারিক মনে করছেন, নতুন ব্যবস্থা চালু হলে নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করা যাবে। যতক্ষণ না ব্যবস্থাটি সম্পূর্ণ ভাবে চালু হচ্ছে তার আগে থেকে সবটা বোঝা যাবে না।