সাবেক কালের দুর্গাপুজোয় দেবীর ভোগ মানেই আলাদা টান। শুদ্ধাচারে, শুদ্ধ চিত্তে রান্না করা অন্নভোগ স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। কোথাও খিচুড়ি কোথাও আবার সাদা ভাত আবার কোথাও পোলাও। মা দুর্গার ভোগ রান্না এবং পরিবেশন দু-ই দর্শনীয়। সপ্তমী থেকে নবমী এই তিনদিনের মা দুর্গা জন্য বিশেষ ভোগের আয়োজন করা হয়। শাস্ত্রাচার মেনে ভোগ রান্না যেমন করতে হয়, তেমনি তাকে ঘিরে বিচারও কম নয়। দেবী দুর্গার ভোগ ঘিরে প্রতিটি বাঙালির আলাদা আবেগ, আলাদা আকর্ষণ কাজ করে। বাড়ির পুজো হোক বা বারোয়ারি পুজো সেই ট্রাডিশন আজও চলছে।
সাবেকী পুজো মূলত সম্পন্ন গৃহস্থ বা জমিদার বাড়িতে হত। ব্রাহ্মণ পরিবার হলে অন্নভোগে বাধা ছিল না, কিন্তু অব্রাহ্মণ পরিবার হলে দেবীকে লুচি, ফল, মিষ্টি নিবেদন করা হত ভোগ হিসাবে। দুর্গাপুজো যখন বারো-ইয়ারি হয়ে উঠল তখন তা বদলে গেল সত্যিকারে জনগনের উৎসবে। পুজোর সংকল্প হত ব্রাহ্মণ ব্যক্তির নামে। তা অন্নভোগ নিবেদনে কোনও বাধা থাকত না।
ভোগের আবার আমিষ, নিরামিষও আছে। দুর্গাপুজো করা হয় বৈষ্ণব এবং শাক্ত মতে। বৈষ্ণব মতের পুজোর ভোগ থাকে নিরামিষ। আর শাক্তমতের পুজোতে দেবীকে মাছ এবং ছাগমাংস নিবেদন করা হয় অন্নভোগের সঙ্গে। তবে সব ক্ষেত্রেই পেঁয়াজ ও রসুনের ব্যবহার নিষিদ্ধ। অন্নভোগের সঙ্গে থাকে পরমান্নও।
২০২০-র পুজো সব দিক থেকেই অন্যরকম। আর এবারের পুজোকে বিশেষ করে তুলতে প্রগতি রাইসের তরফ থেকে মহাভোগের জন্য চাল নিবেদন করা হয় দেবীর উদ্দ্যেশ্য। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ আটটি বারোয়ারী পুজোকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। দমদম পার্ক সার্বজনীন, ত্রিধারা অকালবোধন, আহেরীটোলা সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি, অজেয় সংহতি, শিবমন্দির সার্বজনীন দুর্গোৎসব, সন্তোষপুর লেকপল্লী, মিতালী কাঁকুড়গাছি, কসবা বোসপুকুর শীতলামন্দির এই আটটি ক্লাবের মহাষ্টমীর ভোগের সেবায় গোবিন্দভোগ চাল দেওয়া হয়। দুর্গাপুজোর ভোগের ঐতিহ্যকে সার্বজনীন করে তুলতেই এই প্রচেষ্টা।