দুর্গা চচ্চড়ি থেকে তেল চচ্চড়ি সবই মা দুগগার ‘স্পেশ্যাল রান্না’

দুর্গা দেবী, দশপ্রহরণধারিনী। অসুরনাশ করে তিন ভুবনের অধীশ্বরী। কিন্তু সে দেবী-ই আবার কিনা ঘরের মেয়ে। দশ হাতের অস্তর-শস্তর সামলেও স্বামী-পুত্র-কন্যা নিয়ে তার ভরা সংসার। বচ্ছর ঘুরে ঘরে এসেছে মেয়ে। তাকে নিরামিষ খেতে দেওয়া যায় না। তাই জাল পড়ে পুকুরে। ধরা হয় ছোট-বড় মাছ। পাত সাজানো হয় পঞ্চ ব্যঞ্জনে। দীন দুঃখীর ঘরের মেয়ে উমা, রাজমৎসে তার লোভ নেই, পছন্দ শোল-বোল ল্যাটা। হেঁশেল ভরে যায় মৎসব্যঞ্জনের গন্ধে। সামান্য হয়ে ওঠে অসামান্য হয়ে। দুর্গা পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বিভিন্ন ধরনের চচ্চড়ি। নানা রকম মাটিজ সবজি আর বেঁচে থাকা ‘বাতিল’ দিয়ে রান্না করা হয়। এ সবই মা দুগগার জন্য ‘স্পেশ্যাল রান্না’।  

দুর্গা চচ্চড়ি

দুর্গা চচ্চড়ি। প্রায় না শোনা এক পদের নাম। গেরস্থ বাড়িতে যাকে বলে পড়তি-ঝড়তির চচ্চড়ি, উৎসবের দিন গুলোতে সেই পদের নামই হয়ে যায় দুর্গা চচ্চড়ি। সাধারণ চচ্চড়ির থেকে এই বিশেষ চচ্চড়ি রান্নার উপকরণ এবং ধরন একটু আলাদা।

কী কী লাগবে?

কচু

কুমড়ো

চাল

কুমড়ো

আলু

ঘেঁষো চিংড়ি/ মাছের মুড়ো  

কালো জিরে

পাঁচ ফোড়ন

শুকনো লঙ্কা

আদাবাটা

নুন

কীভাবে করবেন 

খোসা ছাড়িয়ে সমস্ত সবজি সরু সরু করে কাটবেন। কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করে শুকনো লঙ্কা আর পাঁচ ফোড়ন দিন। তেল গরম হয়ে মশলার গন্ধ বেরলে সব সব্জি কড়াইতে দিন। জল বেরতে শুরু করলে চিংড়ি মাছ দিন। হলুদগুঁড়ো, আদাবাটা, নুন আর অল্প চিনি দিয়ে নেড়েচেড়ে চাপা দিন। জল বেরিয়ে শুকনো হয়ে গেলে নামিয়ে নিন।

এই রান্নায় সবজি যদি সরু করে কাটা হয়, অনেকেই খোসা সমেত রান্না করেন। একটি বেশি তেল দিয়ে ভাপেই পুরো রান্না হয়। খুব বেশি নাড়াচাড়া করলে সবজি গলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মশলার ব্যবহার কম হয়।

মুড়ো দিয়ে রান্না করলে মুড়ো নুন-হলুদ দিয়ে আগে ভেজে নিতে হবে।     

গিলাসি চচ্চড়ি

ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী পর্যন্ত অনেক বাড়িতেই চলে নিরামিষ আহার। নবমীতে দেবীর কাছে ছাগ নিবেদন করা হয়। এই দিন নিরামিষ আহারে ইতি পড়ে। নিরামিষ খাসির ঝোল রান্না হয় অনেক বাড়িতেই। তবে এদিনের অন্যতম আকর্ষণ মেটে চচ্চড়ি বা গিলাসি চচ্চড়ি। কোথাও কোথাও আবার দশমীতেও এই পদ রান্না করা হয়।

কী কী লাগে?

খাসির মেটে

পেঁয়াজ কুচি

আদা বাটা

রসুন বাটা

তেজপাতা

শুকনো লঙ্কা বাটা

হলুদ বাটা

জিরে-গরমমশলা বাটা 

কাঁচা লঙ্কা

ঘি

নুন, চিনি স্বাদ মতো

কীভাবে রাঁধবেন

কড়াইতে বেশ অনেকটা তেল দিন। সঙ্গে অল্প চিনি। তেল গরম হলে পেঁয়াজ দিন। পেঁয়াজ ভাজা-ভাজা হয়ে এলে আদা-রসুন বাটা আর অন্য সব বাটা মশলা দিয়ে কষতে থাকেন। তেল ছাড়লে মেটে দিন। অল্প নেড়েচেড়ে কাঁচালঙ্কা আর নুন-চিনি ছড়িয়ে ঢাকা দিন। মেটে নরম হয়ে গেলে ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। একেবারেই শুকনো হয় এই পদ। ভাতের সঙ্গে খেতে ভাল লাগে। 

শাপলা চচ্চড়ি

শরৎ আসার আগে থেকেই গাঁয়ের খাল-বিল ভরে যায় শাপলা আর পদ্মে। এই ফুল যেন শরৎ বয়ে আনে। বিলের জল থেকে ফুল তুলে নিয়ে আসা হয় রান্না ঘরে। বর্ষার পর সব্জির আকালের দিনে কচু, ওলের সঙ্গে শাপলাও হয়ে ওঠে বিপদের ত্রাতা। উৎসবের দিনগুলোতেও তাই শাপলা মানুষের সঙ্গী। মা দুগগা ঘরে এলে গেরস্থ বাড়িতে যে কোনও একদিন শাপলার পদ হবেই।

কী কী লাগে

 শাপলা

চিংড়ি মাছ

 কাঁচা লঙ্কা

পেঁয়াক কুচি

রসুন বাটা

হলুদ লঙ্কা গুঁড়ো

নারকেল কোরা

নুন-চিনি

কীভাবে করবেন

শাপলা লতা বেছে দেড় ইঞ্চি লম্বা করে কেটে ধুয়ে জলে ভাপিয়ে নিন। পরিষ্কার করা চিংড়ি মাছ নুন হলুদ মাখিয়ে তেলে ভেজে নিন। ওই তেলেরই একই তেলে পেঁয়াজ কুচি ভাজুন। পেঁয়াজ গোলাপী হয়ে এলে আদা-রসুন বাটা, হলুদ-মরিচের গুঁড়া, চিনি এবং সামান্য জল দিয়ে কষিয়ে নিন। মসলা কষানো হয়ে গেলে শাপলা ও চিংড়ি মাছগুলো দিয়ে নাড়ুন। এবার কোরানো নারকেল, নুন এবং কাঁচা মরিচ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নেড়ে আঁচ কমিয়ে ঢেকে দিন। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলে আরেকবার নেড়ে আবার ঢেকে দিন। জল শুকিয়ে গেলে নামিয়ে নিন। খেতে হবে কিন্তু গরম ভাত দিয়ে।  

মাছের তেল চচ্চড়ি

মাছের তেল চচ্চ্রি এক বিখ্যাত পদ। অনেকে মনে করেন চচ্চড়ির মধ্যে মাছের তেল দিলেই তা তেল চচ্চড়ি হয়ে গেল, আসলে তা নয় কিন্তু। তেল চচ্চড়ি রান্নার ধরন
একেবারেই আলাদা।

কী কী লাগবে

মাছের তেল

বেগুন মাঝারী সাইজের ছোট করে কাটা

আলু ছোট করে কাটা

বড় সাইজের একটা পেঁয়াজ কুচি করা

একটা গোটা রসুন বাটা

কাঁচা লঙ্কা বাটা

হলুদ গুঁড়ো

লঙ্কা গুঁড়ো

নুন স্বাদ অনুযায়ী

সরষের তেল ৬ চা চামচ

একটা এলাচ ও একটা দারচিনি বাটা

কীভাবে রাঁধবেন

মাছের তেল ভালো করে ধুয়ে নিয়ে জল ঝরিয়ে রাখুন। নুন ও সামান্য লঙ্কার গুঁড়ো এতে মাখিয়ে রাখুন। কড়াই গরম হলে তাতে সরষের তেল দিন। তেল থেকে ধোঁয়া উঠতে শুরু করলে মাছের তেল দিয়ে ঢেকে দিন। আঁচ কম থাকবে। ৩ মিনিট মত ঢেকে রান্না করার পর পেঁয়াজ কুচি দিন। গ্যাসের আঁচ সামান্য বাড়িয়ে রান্না করার পর, কেটে রাখা আলু, বেগুন, দিয়ে দিন। নেড়েচেড়ে রসুন কাঁচালঙ্কা, দারুচিনি আর এলাচ বাটা দিন।

৫ থেকে ৬ মিনিট মত কষাতে থাকুন। তারপর হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কার গুঁড়ো ও স্বাদ অনুযায়ী নুন দিয়ে দিন। হলুদের কাঁচা গন্ধ চলে গেলে কড়াই ঢেকে দিন। ৭ মিনিট পর আলু বেগুন সব ভালো করে সেদ্ধ হয়েছে কিনা। জল টেনে এলে নামিয়ে নিন। এই পদের জন্য গরম ভাতই আদর্শ।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...