ঢাক বেজেছে নেদারল্যান্ডসে

ঢাকের আওয়াজ ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ। মানে, শুধু লিট্যারালি নয়, মেটাফোরিকালি-ও। পুজো এসে গেছে মানেই, ঢাকে কাঠি পড়েছে। অন্যান্য বিদেশী পুজোতে কি হয়, তার অভিজ্ঞতা নেই, কিন্তু বছর পাঁচেক আগে নেদারল্যান্ডসে পুজোয় গিয়ে মনে হতো - ঢাকের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি না তো! ঢাক বেশ তালেই বাজছে, মানে লিট্যারালি, কিন্তু কোথায় যেন তাল কেটে যাচ্ছে। ওই ওয়াইন-হাতে হাই-সোশাইটির ভিড়ে নিজের অকিঞ্চিৎকর উপস্থিতি বড়ই বেমানান লাগতো। তাই, এক কোণায় লুকিয়ে মায়ের দর্শন সেরে কোনমতে বাইরে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতাম। তখনই উপলব্ধি হয়, একটু উষ্ণতা না থাকলে ঢাকের আওয়াজটা ঠিক খোলে না।

বছর-দুয়েক আগে নেদারল্যান্ডসে হৈচৈ-আয়োজিত দুর্গাপূজার সূচনা হয়। ওই, ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখেই ভয় পেয়েছিলাম বটে, কিন্তু ওই সময়ে কলকাতায় ফেরার উপায় নেই। অগত্যা ভাবলাম, বাড়ির কাছে, একবার ঘুরেই আসি।

গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই হাসিমুখ, "শুভ শারদীয়া, প্রসাদ নিয়ে যাবেন কিন্তু!" সেই, কথায় বলে, মর্নিং শো-স দ্যা ডে। শুরুতেই এতো উষ্ণতা, লক্ষণ খুব-একটা খারাপ মনে হচ্ছে না। যাক, ভিতরে ঢুকে দেখি, হৈচৈ-তে হৈচৈ-কান্ড - কচিকাঁচাদের দৌড়াদৌড়ি, কমিটি-দাদার ব্যস্ততা, পুরোহিত-মশায়ের মন্ত্রোচ্চারণের মাঝে সদ্য-বিবাহিত দম্পতির খুনসুটি। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখ থাকলে হয়তো দেখতে পেতাম, পঞ্চপ্রদীপের আলোয় আজ মায়ের হাসি যেন সামান্য বেশী চওড়া। এই তো, আমার-আপনার চেনা পাড়ার পুজো! এই পুজো আমাকে-আপনাকে ঘিরে, আমাদের বন্ধুদের ঘিরে, আমাদের পরিবারকে ঘিরে। গল্প-আড্ডা-খাওয়াদাওয়া, সবকিছুর মধ্যেই আন্তরিকতার ছোঁয়া। আর, তার মাঝেই কোথায় যেন মন-কেমন-করা ধুনোর গন্ধের মাঝে - ঢাক বাজছে!  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...