Durga in Bengal: বাংলার দ্বিভুজা, ত্রিভুজা, চতুর্ভুজা দুর্গাদের কথা

দেবী দুর্গার আরেক নাম দশভুজা। তিনি দশ হাতে অসুরের সংহার করেন। তবে ব্যতিক্রম কি নেই? বাংলায় দ্বিভুজা, ত্রিভুজা এমনকি চতুর্ভুজা দুর্গাও পূজিতা হন।

ভবানীপুরের মিত্রবাড়িতে দেবী দুর্গা দ্বিভুজা। পরিবারের এক সদস্য স্বপ্নে দেখেন, দেবী দু'হাত বাড়িয়ে গয়না চেয়েছেন তাঁর কাছে। তিনি দেবীকে একজোড়া সোনার বালা গড়ে সেই। তারপর দেবী স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, এই দু’হাতের গয়নাতেই তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন। সেই থেকেই ঠিক করা হয় দেবী দ্বিভুজা রূপেই পূজিতা হবেন মিত্র পরিবারে। আপাতদৃষ্টিতে দেবী দ্বিভুজা হলেও, আদপে দশভুজা। আটটি ছোট ছোট হাত ঢেকে রাখা হয় চুলের নীচে। হিদারাম ব্যানার্জি লেনের দত্ত বাড়িতেও দ্বিভুজা দুর্গা। উমা ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাপের বাড়ি আসেন। দেবী দুর্গা মহাদেবের বাম উরুতে অধিষ্ঠাত্রী। অর্থাৎ হরগৌরি রূপে পুজো চলে।

dibhuja durga

পটুয়াটোলার ধর বাড়িতেও দুর্গা দ্বিভুজা। মদনমোহন ধরই অভয়া দুর্গার পুজো শুরু করেন। আসুরদলনি নন দেবী। দেবীর পাশে থাকেন লক্ষী, সরস্বতী, কাতিক, গণেশ আর জয়া, বিজয়া। হুগলির মঠবাড়ির প্রতিমা দ্বিভুজা। দেবীর এক হাতে থাকে সর্পরাজ ও অন্যহাতে ত্রিশূল। মায়ের কেশের পিছনে ছোট ছোট আটটি অস্ত্রবিহীন হাত লুকোনো থাকে।

বর্ধমানের রায়রামচন্দ্রপুরের রায়বাড়ির দুর্গা দ্বিভুজা। প্রায় ৪০০ বছর আগে অজয় নদের বন্যায় ভিটেমাটি হারিয়ে বীরভূমের বিশ্বনাথ রায় দুই পুত্রকে নিয়ে রামচন্দ্রপুরে আসেন। বর্ধমান রাজ কীর্তিচাঁদ মহাতাবের তাঁদের রামচন্দ্রপুর মৌজা দেন। গ্রামের নাম বদলে হয় রায়রামচন্দ্রপুর। শুরু হয় রায়দের দুর্গাপুজো। দেবীর আটটি হাত খুবই ছোট, আড়ালে ঢাকা থাকে। বাকি দুই হাতে থাকে ত্রিশূল।

কলাছড়াহাত দুর্গা, দু’টি হাত স্বাভাবিক। বাকি আটটি হাত ছোট ছোট। বসিরহাটের দণ্ডীরহাট বসুবাড়ির দালানে এমন দুর্গা পূজিতা হন। একবার ষষ্ঠীর দিন প্রতিমার হাতের আঙুল ভেঙে যায়। বসুবাড়ির আদিপুরুষ জগবন্ধু বসুর মা স্বপ্নাদেশ পান, ভাঙা হাত না জুড়েই পুজো করতে। পরের বছর থেকে আটটি হাত ছোট, দু’টি হাত বড়, রেখে প্রতিমা গড়া হয়। ছোট হাতগুলি কলার ছড়ার মতো দেখতে বলে নাম কলাছড়াহাত প্রতিমা। বনগাঁয় এমনই এক প্রতিমা দেখা যায়। আটটি ছোট বলে নাম বেড়ালহাতি প্রতিমা।

বর্ধমানের সাটিনন্দী গ্রামের নাগ পরিবারে দ্বিভুজা মা দুর্গা পূজিতা হন। দেবী ‘হরগৌরী’ রূপে আসেন। তাঁর এক হাতে বরাভয় মুদ্রা আর অন্য হাতে পদ্ম। নন তিনি মহিষাসুরমর্দিনী। দেবী এখানে সিংহবাহিনীও নন। তিনি অধিষ্ঠান করছেন শিবের বাহন নন্দীর পিঠে। এই রূপে একাধিক বনেদি বাড়িতে দেবী পূজিতা হন। বিডন স্ট্রিটের ভোলানাথ ধামে অর্থাৎ দত্তবাড়ির পুজোয় দেবী থাকেন ষাঁড়ের পিঠে। ইছাপুর নবাবগঞ্জের মন্ডলবাড়িতেও দেবী বৃষর পিঠে আরোহণ করে থাকেন। আন্দুলের কুন্ডু বাড়ি, চুঁচুড়ার শীলবাড়িতে হরগৌরী দুর্গা, এভাবেই শিবের কোলে মা অবস্থান করেন। মা তো কেবল অসুরদলনী নন, তিনি বরাভয়দাত্রীও বটে। দেবীর দ্বিভুজা রূপে দেবী হরগৌরী ও অভয়া দুই রূপেই পূজিতা হন।

চতুর্ভুজা দুর্গা, পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার জেলেপাড়ার দাসচৌধুরী পরিবারে চতুর্ভুজা দুর্গামূর্তির আরাধনা হয়। দাসচৌধুরীদের দুর্গামূর্তির উপরের দুই হাতে খাঁড়া ও চক্র এবং নীচের দু’হাতে ত্রিশূল ও সাপের দেখা মেলে। মায়ের চার হাতে অসংখ্য শাঁখা পরানো হয়। প্রায় চারশো বছর আগে পাঁচুগোপাল দাসচৌধুরীর পিতা ভৈরব দাস চতুর্ভুজা দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরের আমরাল গ্রামেও চতুর্ভুজা দেবী দুর্গা পূজিতা হন। মুর্শিদাবাদের পাশলা গ্রামের জমিদার রায়চৌধুরীদের দুর্গাও চতুর্ভুজা। চার হাতে থাকে খড়্গ, ঢাল, ত্রিশূল ও অসুরের চুলের মুঠি। শরিকি কাজিয়ায়, এই বাড়ির এক উঠোনে তিনটি বেদিতে তিন চতুর্ভুজা দুর্গার আরাধনা হয়।

ত্রিভুজা দুর্গা, হুগলির বলাগড় ব্লকের সোমড়াবাজারের সেন পরিবারে দেবী দুর্গা পূজিতা হন ত্রিভুজা রূপে। ১৭৬০ সালে সেন বংশের পূর্বপুরুষ রাজা রামচন্দ্র সেনের হাত ধরেই এই পুজো শুরু হয়েছিল। দেবীর রূপটি আসলে স্বপ্নাদিষ্ট। আদপে দেবীর দশ হাতই থাকে। দুই কাঁধেই ছোট ছোট সাতটি হাত থাকে। সেগুলি দৃশ্যমান নয়। দেবীর তিনটি হাত দেখা যায়, দুটি ডান হাত। একটি বাম হাত। দুটি দক্ষিণ হস্তে থাকে খড়্গ ও শূল। বাম হাতে অসুরের কেশ ও নাগপাশ ধরা থাকে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...