কথায় বলে, চোখের জল অনেক দামি। সত্যিই তাই। চোখের জলের দাম আপনাকে অন্য কেউ না দিলেও আপনার চোখের জলের দাম কিন্তু আপনাকেই দিতে হবে। কারণ চোখের জল যদি একবার শুকিয়ে যায় তাহলে কিন্তু বিপদ। চোখের জল বা অশ্রু চোখের অভ্যন্তরকে সিক্ত রাখতে সাহায্য করে থাকে। চোখের জলের সাহায্যেই চোখ থেকে ধুলোবালি বাইরে বেরিয়ে গিয়ে থাকে। তাই চোখের জল যদি কমে যায় অর্থাৎ চোখ যদি ড্ৰাই হয়ে যায় তাহলে চোখের নানা সমস্যা হতে পারে। চলুন এই বিষয়ে আজ বিশদে আলোচনা করা যাক.....
ডিজিটাল যুগে আমাদের বেশিরভাগ সময়ই কেটে যায় মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে। এছাড়াও কাজের সুবাদে আমাদের অনেককেই সারাটা দিন কম্পিউটারে চোখ রেখেই কাটাতে হয়। অনেকসময় আমরা দেখি দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করার চোখ কড়কড় করতে থাকে। অনবরত চোখ দিয়ে জল পড়া থেকে শুরু করে চোখ লাল হয়ে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা আমাদের জেরবার করে তোলে। কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ততক্ষন সেই সমস্যা নিয়ে আমরা ভাবনাচিন্তা করতে পছন্দ করি না। সেই মুহূর্তে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ায় আমাদের না পসন্দ। কিন্তু এই সমস্যাগুলি কেন হয় জানান? এই সমস্যাগুলুই মূলত হয় চোখের জল শুকিয়ে যাওয়ার জন্য। এই ড্ৰাই আইজের সমস্যার যদি সঠিক চিকিৎসা না হয় তাহলে এর থেকে অন্ধত্ব আসার সম্ভাবনাও থেকে যায়।
আমরা সকলেই জানি, চোখের মধ্যেই থাকে অশ্রুগ্রন্থি। সেই অশ্রুগ্রন্থি থেকেই অশ্রু নির্গত হয়ে থাকে। জল,তেল, পিচ্ছিল মিউকাস এবং জীবাণুনাশক অ্যান্টিবডি দিয়ে তৈরী হয় আমাদের চোখের জল।অশ্রুগ্রন্থি থেকে জল নিঃসরণ কমে গেলে এই ড্ৰাই আইজের সমস্যা তৈরী হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, চোখের জল লুব্রিক্যান্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই জল নিঃসরণ কমে গেলে চোখ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এর ফলে চোখ কড়কড় করার সমস্যা থেকে শুরু করে চোখ থেকে অনবরত জল পড়া এইসব সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এই সময় আলোর দিকে তাকাতেও সমস্যা হয়ে থাকে।চক্ষুবিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বয়স ৫০ এর উপরে গেলে এই সমস্যা সাধারণভাবেই আসতে পারে।মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পরে এই সমস্যা আসতে পারে। এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ এসিতে থাকার ফলে অথবা দূষিত পরিবেশে বেশিক্ষন থাকার ফলেও এই সমস্যা হতে পারে। যাদের নার্ভের রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও এই রোগটি হতে পারে। নানা কারণবশতই এই রোগটি এসে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে এর চিকিৎসা করিয়ে নিলেই এর সমাধান সম্ভব। কিন্তু বেশিদিন বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখলে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কখন বুঝবেন এবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত?
সমস্ত রোগই প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু লক্ষণ প্রকাশ করে থাকে। যেরকম এই রোগটিও কিছু লক্ষণ দেখিয়ে থাকে যা চিনে নিয়ে যত শীঘ্র সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এর প্রাথমিক যখনগুলি হলো,
১) চোখ অনবরত কড়কড় করতে থাকে এবং চোখ লাল হয়ে যেতে থাকে।
২) চোখ ভারী ভারী মনে হয়।
৩) চোখ শুকিয়ে গেছে বলে মনে হয়। ড্ৰাইনেস এসেছে তা বোঝা যায়।
৪) চোখ থেকে অবিরাম জলও পড়তে পারে।
৫) কাছের বা দূরের বস্তু দেখতে অসুবিধা হয়।
৬) আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধা হয়ে থাকে।
এর সাথে সাথেই মাথাব্যথা থেকে শুরু করে জ্বর এমনকি নাকবন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যাও দেখা যায়। এইসব লক্ষণ প্রকাশ পেলে শীঘ্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ড্রাই আইজের সমস্যা হলে কি করবেন?
১) ড্রাই আইজের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গরম জলে কাপড় ভিজিয়ে চোখে গরম ভাপ দিতে থাকুন।
২) চোখের উপরের পাতা ও নিচের পাতা ভালো করে মালিশ করুন।
৩) ঘনঘন চোখের পাতা ফেলতে থাকুন। চোখের পলক বারবার ফেলতে থাকলে অশ্রুগ্রন্থি থেকে অশ্রু নির্গত হয়ে চোখকে ভিজিয়ে রাখতে সাহায্য করে থাকে।
৪) দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে না থেকে মাঝে মাঝে বিরতি নিন।
৫) চিকিৎসকের পরামর্শমতো আইড্রপ ব্যবহার করুন।
আমাদের অঙ্গপপ্রত্যঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে দামি হলো আমাদের চোখ। সেই চোখ যাতে কখনো শুষ্ক হয়ে না যায় সেইদিকে খেয়াল রাখুন।