আজ এমন এক মিষ্টির কথা বলব যা ১৯৬ বছর বয়সেও অনবদ্য স্বাদ এবং জনপ্রিয়তার অধিকারী। এই মিষ্টি কিন্তু শুরুর দিন থেকেই আন্তর্জাতিক মহলেও বেশ সমাদৃত। কথিত আছে যে, সময় বদলালেও সেই মিষ্টির স্বাদ নাকি এখনো আছে একই রকম।
বলছি বাংলাদেশের মুক্তাগাছার মন্ডার কথা। এই মুক্তাগাছা হল বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার একটি উপজেলা। প্রসঙ্গত বলা ভালো যে ময়মনসিংহ থেকে ১৯কিলোমিটার দূরে এই মুক্তাগাছার আসল নাম ছিল বিনোদবাড়ি। জমিদার শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী এখানে বসতি স্থাপন করলে গ্রামের প্রজা মুক্তারাম কর্মকার জমিদার মশাইকে একটি গাছা অর্থাৎ পিতলের গাছ প্রদীপ উপহার দেন। জমিদার মশাই তাতে প্রীত হয়ে মুক্তারামের ‘মুক্তা’ এবং তাঁর দেওয়া ‘গাছা’ একত্রিত করে বিনোদবাড়ির নতুন নাম রাখেন ‘মুক্তাগাছা’। জন্ম হল মুক্তাগাছার।
এই মুক্তাগাছার মন্ডা প্রথম তৈরি করেছিলেন গোপাল চন্দ্র পাল। আর তার মন্ডার জন্মকথা কিন্তু বেশ আকর্ষণীয়। মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করলেও নবাব সিরাজের মৃত্যুর পর তিনি মুক্তাগাছা চলে যান। আর সেখানে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে প্রথম মন্ডা তৈরি করেন।
মন্ডা তৈরির স্বপ্নাদেশ বিষয়টি আজও চর্চিত। কথিত আছে এক সন্ন্যাসীর স্বপ্নাদেশ পান তিনি। তারপর এমন কয়েক রাতে স্বপ্নেই সেই সন্ন্যাসী তাঁকে মন্ডা বানানোর পদ্ধতি শিখিয়ে তাকে বিখ্যাত হওয়ার আশীর্বাদ করেন। কিছুদিন পর মন্ডা প্রস্তুতিতে সড়গড় হলে গোপাল এই নতুন মিষ্টি পরিবেশন করেন মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর দরবারে। ব্যাস, ফলে গেলো সন্ন্যাসীর কথা। জমিদারের আনুকূল্যে ব্যবসা বৃদ্ধি পায় গোপালের, ক্রমশঃ খ্যাতির শীর্ষে উঠলেন তিনি - জনপ্রিয় থেকে এক্কেবারে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হলো গোপাল পালের মন্ডা। কে কে সেই মন্ডায় মজেননি! নেতাজি, ব্রিটেনের রানী, বঙ্গবন্ধু,বিধান চন্দ্র রায়, ইন্দিরা গান্ধী, অনেকেই মুগ্ধ হয়েছেন।
এখন তাঁর পঞ্চম প্রজন্ম শ্রী রমেন্দ্রনাথ পাল এবং ব্রাদার্স এই ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং একই ভাবে তার মান বজায় আছে। দোকানে এখনো গোপালচন্দ্রের একটা কাঠের মূর্তি কাঁচের বাক্সে রাখা, আজও প্রথম বানানো মন্ডা তাকেই নিবেদন করে দৈনন্দিন ব্যবসা শুরু হয়, আজও তাঁর অস্তিত্ব সেই বংশধরেরা স্বীকার করেন। এমনিতে দুধ - চিনি দিয়ে বানানো হলেও শীতকালে বানানো হয় গুড় আর দুধ সহযোগে। দেখতে গোল ও চ্যাপ্টা তবে থাকে কাগজের মোড়োকে। তামাম বাংলাদেশে এমন স্বাদের মন্ডা পাওয়া দুষ্কর। আর এখনো পর্যন্ত কোথাও এর কোনো শাখা নেই।
যাইহোক, বাংলাদেশ গেলে এই মন্ডার স্বাদ নিতে ভুলবেন না, যদি চান এখন অনলাইনের দৌলতে ঘরে বসেই তার স্বাদ পেতে পারেন। নেহাত মন্দ লাগবে না।