বিজ্ঞানী থেকে চাষি, অনুপ্রেরণা আব্দুল কালাম
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও বিজ্ঞানী এ পি জে আব্দুল কালামের এক কথায় বিজ্ঞানী থেকে চাষির জীবন ধারন।
গল্পটা সরাসরি এই আঙ্গিকে না চল্লেও;কালামের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুই প্রভাবেই জর্জরিত ইনি।
মানুষ প্রকৃতির আত্মজ। মানুষের শারীরিক বিভিন্ন রোগ ব্যাধির সমাধান মেলে প্রকৃতির কোলেই। এই অনুভূতি থেকেই কর্মক্ষেত্রের বদল।
ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এর বিজ্ঞানী।বারো বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা সেখানেই। তারপর ২০০৫ -এ ডাক পড়ে মার্কিন মুলুকে। সেখানে গবেশনার সুযোগ।
তিনি হরি নাথ।ডঃ হরি নাথ।তামিলনাড়ুর পেন্নাগরম মফস্বলের একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী।যিনি সান্নিধ্য পেয়েছিলেন স্বয়ং কালামের।
ডি আর ডি ও –তে কর্মরত থাকাকালীন ওঁর অনুমতিতেই সম্ভব হয়েছিল মার্কিন মুলুক যাত্রা। দুই বছরের ছুটির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনিই। তবে শর্ত ছিল সময় শেষে দেশে ফিরতে হবে। আর নিজের অভিজ্ঞতা কে দশের কাজে লাগাতে হবে।
সেই বারোটা বছরের অনেক সঞ্চয়ই সময়ে ফল দিয়েছে তাঁকে। বহু বিজ্ঞানীর সাহচর্যে আসা থেকে শুরু করে হৃৎপিণ্ড ঘটিত অজস্র সমস্যার নতুন থেকে নতুনতর ওষুধের সন্ধান।
আমেরিকায় ক্যারোলিনা মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ তাঁকে আরও অভিজ্ঞতার মুখপেক্ষী করে। প্রচুর নতুন নতুন ওষুধ তৈরি করেন।পান প্রচুর পুরস্কারও।
কিন্তু একটা সময় আসে যখন স্বীকৃতির আড়ালে উঁকি দেয় অন্যান্য উৎকণ্ঠারা। দেশের বাড়িতে মা একা।স্পণ্ডিলাইটিস আর আর্থরাইটিস এ কাবু মা তখন শয্যাশায়ী। শুধু ফোনালাপেই বললেন একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে।আর?
দিন যত এগিয়েছে ব্যথা তত কাবু করছে শরীর। এরকম সময় একজন জাপানী বিজ্ঞানীর একটি গবেশনামূলক অনুচ্ছেদ তাঁর হাতে আসে। সেখানে মরিঙ্গা পাতার বিশেষ গুনাগুন সম্মন্ধে ছিল বিশেষ একটি আলোচনা।
প্রায় দুশো রকমের রোগ সারাতে অব্যর্থ সেই পাতা। আর্থরাইটিস তার অন্যতম। বাড়িতেই ছিল সেই পাতার চার চারটে গাছ। পরামর্শ বদলাল। বদল এল শরীরেও। মা সেরে উঠলেন। এই ঘটনাই বদলাতে চলেছে হরি-র আগামী জীবনের দিশা।
বুঝলেন তাঁর ওষুধ তো সাধারণ মানুষদের তেমন উপকারে আসছে না। গবেষণার ফায়দা নিচ্ছিল নামী দামি ওষুধ কোম্পানিগুলো। ২০১৫ সালে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। শুরু হল মরিঙ্গা পাতার উপর বিস্তর রিসার্চ ।
মরিঙ্গার সঙ্গে আরও কিছু গাছড়া মিশিয়ে মরিঙ্গার পাউডার বানান তিনি। সেগুলো স্থানীয়দের মধ্যে বিলি করতে শুরু করেন। আশ্চর্যজনক ফল দেয় সেগুলো।
তখনই একটা বিষয় নাড়া দেয় তাঁর মনে। ওষুধের জন্ম যখন এই সমস্ত গুল্ম থেকেই; তবে ওষুধের উপর নির্ভরশীল না হয়ে দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে বদল আনলেই তো রোগ উপশম সম্ভব!
নিজের জমিতেই চাষাবাদ শুরু করেন। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে মরিঙ্গা, আমলকি, কারিপাতা এবং মরসুমি সব্জি ফলান। সার হিসাবে কাজে লাগান গোবর, গোমূত্র, সব্জির খোসা ইত্যাদি।
কালাম সে দিন দেশে ফিরে আসার শর্ত না চাপালে হয়তো এই আজ কোনও দিনই আসত না তাঁর জীবনে- মনে করেন আজকের মানবসেবায় ব্রতী হরি ।তাই এর পুরোভাগের কৃতিত্ব তাঁরই প্রাপ্য।
শৈশবই উপযুক্ত সময় ছিল এক কালে।প্রত্যেক মানুষের জীবনে। যারা একসময় বেড়ে উঠেছিলেন সবুজের মাঝে, সবুজের সঙ্গে। সেই সময়টাই প্রকৃত রঙিন। মাতৃ দুগ্ধে জীবনধারণ।
মায়ের সুধা রসেই তো শিশুর কায়িক বৃদ্ধি আর গঠন। তাই সবুজের সঙ্গেই আজ দিন যাপনে মেতে তিনি। তাঁর এহেন কৃতিত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গিকে কুর্নিশ!