মনে পড়ে ২৬/১১র কথা? মুম্বইয়ের তাজ হোটেল, নরিম্যান হাউস দখল করে নিয়েছে জঙ্গি বাহিনী। সেনাবাহিনী ঘিরে ফেলেছে পুরো হোটেল। থেকে থেকেই ধেয়ে আসছে গুলির শব্দ, কিন্তু ভিতরে কী চলছে পরিষ্কার বোঝার উপায় নেই। শুধু তাজ হোটেল কেন, জম্মু-কাশ্মীরের উপদ্রুত এলাকায় অনেকবারই এমন সেনা-জঙ্গি লড়াইয়ের সাক্ষী থেকেছে দেশ।
জঙ্গি ঘাঁটির গোপন খবর জানতে এবার মাঠে নামছে ইঁদুর। এ শুধু কথার কথা না, হায়দরাবাদে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘ডিআরডিও ইয়ং সায়েন্টিস্ট ল্যাবরেটরি’ বা ‘ডিওয়াইএসএল’-এর (DYSL) একঝাঁক তরুণ গবেষক তৈরী করেছেন বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইঁদুর বাহিনী। রোবট বা যান্ত্রিক ইঁদুর নয়, স্বাভাবিক ইঁদুর। এদের দিয়েই ‘র্যাট সাইবর্গ’ তৈরী করা হয়েছে।
‘সাইবর্গ’ কথাটির অর্থ, এক কাল্পনিক ব্যক্তি যার শারীরিক ক্ষমতা শরীরের মধ্যে থাকা যান্ত্রিক উপাদানের কারণে স্বাভাবিক মানুষের থেকে কয়েকগুণ বেশি। সাইবার্গকে বলা যায় অর্ধেক মানুষ – অর্ধেক যন্ত্র।
সাধারণ ইঁদুরদের মস্তিষ্কে বিজ্ঞানীরা একটি ইলেক্ট্রোড স্থাপন করেছেন। ওই ইলেকট্রোডের মাধ্যমে ইঁদুরটি বাইরে থেকে পাঠানো সঙ্কেত গ্রহণ করতে পারবে। বিজ্ঞানীরা যেভাবে সঙ্কেত দেবেন, ইঁদুরটি সেভাবেই কাজ করবে। রিমোট দিয়ে চালনা করা হবে র্যাট সাইবর্গ। তাকে যে পথে পাঠানো হবে সে পথেই হবে তার গতি। লাইভ ভিডিয়ো গ্রহণ করার জন্য ইঁদুরের শরীরে বেঁধে দেওয়া হবে ক্যামেরা। এই ইঁদুর দেওয়ালও চড়তে পারে। তাছাড়া, শত্রুর থেকে লুকিয়ে থাকার স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে। সুড়ঙ্গ বা ভবন বা যে কোনও সন্দেহজনক স্থানে র্যাট সাইবর্গ পাঠিয়ে তথ্য আনা সম্ভব হবে এভাবেই। এই ইঁদুরদের দেখে বোঝার উপায় থাকবে না যে তাদের শরীরে গোপন ক্যামেরা আছে।
ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসের ১০৮তম অধিবেশনে ডিওয়াইএসএল’-এর ডিরেক্টর পি শিব প্রসাদ ‘র্যাট সাইবর্গ’ প্রসঙ্গে বলেন, “তাঁদের উদ্দেশ্য সেমি-ইনভেসিভ ব্রেন ইলেক্ট্রোডের মাধ্যমে ইঁদুরদের ইলেকট্রনিক কমান্ড দিয়ে কৌশলে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা। দ্বিতীয় পর্বে, নন-ইনভেসিভ হয়ে যাওয়া যাবে। মস্তিষ্কে একটি ইলেক্ট্রোড ঢোকানোর পরিবর্তে, একটি লেজার ট্রান্স-রিসিভার-সহ একটি ছোট পিসিবি খুলির উপরে লাগানো হবে। রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করে প্রাণীগুলিকে বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ইঁদুরগুলি সেই নির্দেশ মতো সাড়া দেবে এবং চলবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, গবেষকরা বাহ্যিক সঙ্কেত ব্যবহার করে ইঁদুরগুলিকে চালনা করার প্রক্রিয়া আরও নিখুঁত করার প্রচেষ্টা করছেন।
গতিশীলতার ক্ষেত্রে রোবটের তুলনায় ইঁদুররা নমনীয়। তাই রোবটের বিকল্প হিসেবে ইঁদুরদের বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে, ইনভেসিভ ব্রেন ইলেকট্রোড ব্যবহার করে বাহ্যিক সঙ্কেত দিয়ে ইঁদুরের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাব প্রথম দিয়েছিলেন একদল চিনা বিজ্ঞানী। ২০১৯ সালে ছয়টি ইঁদুর ব্যবহার করে তাঁরা ইঁদুর-সাইবর্গ প্রযুক্তির প্রদর্শন করেছিলেন।