বিস্মৃত এক বাঙালি মনীষা: সতীশ রঞ্জন দাশ

সবুজে সবুজ ক্যাম্পাস। ব্রিটিশ স্থাপত্যে স্কুল বিল্ডিং। দুষ্প্রাপ্য গাছের ছায়া ঢাকা রাস্তা। রাজকীয় আভিজাত্য দেখে ভুল হয়ে যায় ইউরোপ ভেবে।
পোস্টকার্ড সৌন্দর্যের এই ভূমিখন্ড আসলে স্বদেশই। হিমালয়ের কোলে দেহরাদুন। তার কোলে চাঁদবাগ। এখানেই গড়ে উঠেছে দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দ্য দুন স্কুল। ভারতের প্রথম 'পাবলিক স্কুল'।
রাজীব গান্ধী, মনি শঙ্কর আইয়ার, এম জে আকবর আরও কত নাম, এঁরা সকলেই এই স্কুলের প্রাক্তনী।
পরাধীন দেশের বুকে দেশীয় ভাবনার মূল সুরটি বজায় রেখে ব্রিটিশ কাঠামোর স্কুল প্রতিষ্ঠার ভাবনা ভেবেছিলেন এক বাঙালি

DoonSchool1

ব্যারিস্টার। সেই কাহিনী জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে অনেকটা আগে। সেই ১৯২৭-এ।
সতীশ রঞ্জন দাশ। ১৮৭০-এ নৈহাটিতে জন্ম। পরিবারের শিকড়টি অবশ্য বাংলাদেশে। ঢাকার বিক্রমপুরে বিখ্যাত দাশ পরিবারের সন্তান। বাবা দুর্গামোহন দাশ।

সতীশরঞ্জন দাশের লেখাপড়ার পুরোটাই বিলেতে। দেশে ফেরেন ১৮৯৪-তে।
বাবা ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম মুখ। বাড়িতে শিক্ষা-সংস্কৃতির পরিবেশ। বৌদ্ধিক চর্চা আলোচনা চলত পুরোদমে। তিনিও অংশ নিতেন সেসবে। তাই দীর্ঘদিন বিদেশে থাকলেও দেশের সমস্যা নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। বিশেষ করে শিক্ষা।
অভ্যন্তরীণ শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন না এলে জাতির আসল উন্নতি হবে না - একথা বিশ্বাস করতেন মনেপ্রাণে। দেশ স্বাধীন হলেও প্রশাসন ও শাসন ব্যবস্থায় চাই পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত আদর্শ প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব।

DoonSchool2

নিজে বিদেশে পড়াশোনা করেছেন। ব্রিটিশ আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিকে দেখেছেন একেবারে সামনে থেকে। সেখানকার শিক্ষাদান ব্যবস্থা এবং শিক্ষা পরিকাঠামোর ভাল খারাপ সব দিক সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণাও ছিল।
নিজের দেশের মাটিতে, দেশীয় ব্যবস্থায় সেই শিক্ষাকে বপনের ভাবনা শুরু করলেন।

তাঁর স্বপ্ন ছিল এমন এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানের কাঠামো পাশ্চাত্য হলেও দুই দেশীয় শিক্ষাই গুরুত্ব পাবে।
১৯২২-এ তিনি অবিভক্ত বাংলার এডভোকেট জেনারেল হন। তখন থেকেই তাঁর স্কুলের ভাবনার বাস্তবায়ন শুরু হয়। পাশে দাঁড়ান জহরলাল নেহেরু। পাঁচ বছর পর বড়লাট লর্ড আরউইনের একজিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য হন। তখনই দেহরাদুনে স্কুল বোর্ডিং-এর জন্য জমি চূড়ান্ত করেন।

DoonSchool3

স্কুল পরিচালনার বিষয়ে বিশদ জানতে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন। তিনমাস ছিলেন। বিভিন্ন স্কুল নিয়মিত পরিদর্শন করেন সেখানে।
এদিকে অমানুষিক পরিশ্রমে ভিতরে ভিতরে ক্ষয় ধরেছিল। ঘিরে ধরছিল ক্লান্তি। কিন্তু অবসরের অবকাশ নেই। কাজ যে অনেক।
দেশে ফিরলেন। আচমকাই অসুস্থ। ১৯২৮-তে থেমে গেল সব কাজ। বয়স তখন মাত্র ৫৮।
তাঁর অসম্পূর্ণ কাজের ভার শেষ করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাঁর দুই সহোদরা। সবলা রায় এবং অবলা বসু। তাঁদের প্রচেষ্টায় ১৯৩৫-এ শুরু হয় দুন স্কুল। সতীশ রঞ্জন দাশের স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই প্রচেষ্টায় সঙ্গ দিয়েছিলেন আরও অনেক মানুষ।
পরে সবলা রায় কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। অবলা বসু জগদীশ চন্দ্র বসুর স্ত্রী।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...