গাধার পা-জামা

উৎসব-অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র মানুষই সাজগোজ করে তা কিন্তু নয়। আজ যাদের কথা বলব তাদের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য রয়েছে, তারা মনুষ্য প্রজাতি নয়, তবে স্বয়ং রোমানসম্রাজ্যের আশীর্বাদ ধন্য ছিল এদের পূর্ব পুরুষ। তাই এহেন উচ্চকুল সম্পন্ন প্রাণীদেরও যত্নআত্তি, সাজপোশাক একটু ভিন্ন হবে তা আশ্চর্যের নয়। এরা হল বিশেষ প্রজাতির ‘পোইটু গাধা’

গাধা বিশ্বের সবচেয়ে কর্মক্ষম প্রাণী, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তাকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই, তার বুদ্ধি , কর্মক্ষমতা সব কিছু উদাহরণ হিসেবে মনুষ্য সমাজে বড়ই কার্যকরী। কিন্তু যতই সে হাসির পাত্র হোক না কেন, পরিশ্রমের ক্ষমতার জন্যই কৃষিকাজ থেকে মালপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়াতে এদের চাহিদাই ছিল আকাশছোঁয়া।

FotoJet (226)

স্বদেশ হোক বা বিদেশ। গাধার পিঠে চড়ে আলিবাবা থেকে ফ্রান্সের পঞ্চদশ লুইয়ের প্রাসাদের রসদ সবই নিমেষে চলে যেত। তবে এখন যতই আধুনিক যানের আমদানি ঘটুক না কেন, এদের চাহিদা কিন্তু একইরকম রয়ে গিয়েছে।

FotoJet (132)

ঐতিহাসিক ঐতিহ্যবাহি ‘পোইটু গাধা’(পোয়েটভিন) আকারে সাধারণ গাধার থেকে খানিকটা বড় ও লম্বা। সারা বিশ্বে এদের সংখ্যা ২০০৫ এর পশুশুমারী অনুযায়ী ৪৫০। এদের আদি বাসস্থান ফ্রান্সের পোইটু উপত্যকায় – তা থেকেই এদের এই নাম। এদের প্রতিপালনে রোমান সাম্রাজ্যের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। একটা সময় ইউরোপে চড়া দামে এদের কেনা বেচা চলত। লম্বা-চওড়ায় ঘোড়ার মতো হলেও শারীরিক গঠনের জন্য সাধারণ গাধার থেকে কাজের ক্ষমতা এদের বেশি। ঐতিহাসিকদের মতে , ১৭১৭ সালে পঞ্চদশ লুইয়ের উদ্যোগে কৃষিকাজের সঙ্গে সঙ্গে এরা পরিবহনের কাজেও ব্যবহৃত হতে থাকে। তখন থেকেই এদের কদর সমগ্র ইউরোপের বাজারে বেড়ে যায়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এদের চাহিদা খানিক কমে যায় আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রভাবে।

FotoJet (110)

বিংশ শতকেও প্রায় ৩০০০০ গাধার প্রতিপালন করা হত ফ্রান্সের পোইটু উপত্যকায়। একটা সময় নুন ও পশমের কারবারিদের কাছে দারুন কদর ছিল। ভেড়ার মতো উৎকৃষ্ট পশম না হলেও কার্যকরী তো বটেই। তাই অনেকেই পশমের কারণে এদের প্রতিপালন করতে থাকে , সেই সময় ছারপোকা আর মশার থেকে বাঁচাতে মালিকরা এদের চার পা মোটা কাপড়ে ঢেকে দিতো। সেই থেকেই এহেন সাজের শুরু। এখনো বিশেষ সময়ে এবং পর্যটক আকর্ষণে এদের নানা ধরণের পা-জামা পরিয়ে রাখা হয়। এরা প্রকৃতিতে শান্ত ও সাজপ্রিয়। তাই ঐতিহ্য মেনেই এই সাজে সাজানো হয় তাদের।

আজ তাদের চাহিদা কমলেও বাণিজ্যিক চাহিদা আছে ভরপুর। অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিতে এদের প্রজাতি সংরক্ষণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে গাধার এমন পা-জামা পরিহিত সাজ বেশ আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটকমহলে ।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...