১৯৯৯ এর ৭ অগাস্ট। কলকাতা শহরের কলেজস্ট্রিট গোলদিঘির পাশে স্টুডেন্টস হলে কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটা ছোট্ট ঘরোয়া আসরে জন্ম নেয় ‘দোহার’। কালিকাপ্রসাদের একমাত্র সঙ্গী ছিলেন রাজীব। এঁরা দুজনেই আসাম থেকে কলকাতা এসেছিলেন পড়াশুনা করতে। তাঁদের বুকে ছিল বাংলার তৃতীয় ভুবন ও পূর্ববঙ্গের সিলেট অঞ্চলের লোকগান। আর উদ্দেশ্য ছিল কালিকপ্রসাদের কাকা অনন্ত ভট্টাচার্যকে তাঁরই সংগৃহীত গানের ডালি দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। ‘দোহার’ নামটি রাখেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অভীক মজুমদার। স্টুডেন্টস হলের ছোট্ট মঞ্চে কালিকা-রাজীব ছাড়াও সেদিন হাজির ছিলেন নিরঞ্জন, যোগেন ঢাকি, বাবলু, সেবায়ন ও সুদর্শন। সেদিন একের পর এক ভাটিয়ালি, জারি, সারি, গাজন, মনসা মঙ্গল, ধামাইল সহ পূর্ববঙ্গের শ্রীহট্ট অঞ্চলের মনোগ্রাহী সব গানে আসর মাত করে দিয়েছিল দোহার। অনুষ্ঠানের শেষে গামছা পেতে চাওয়া হয়েছিল সেই অনুষ্ঠানের জন্য আর্থিক সাহায্য। খরচের অনেক বেশি টাকা নাকি উঠে এসেছিলো সেদিন।
এরপরেই দূরদর্শন থেকে এল ডাক! ব্যাপারটা খানিকটা মেঘ না চাইতেই জলের মতো! এরপর একদিন শিশির মঞ্চে মঞ্চস্থ হল দোহারের প্রথম একক অনুষ্ঠান। সেদিনের পর থেকে আর থেমে থাকতে হয়নি ‘দোহার’ দলকে। একের পর এক সংস্থা থেকে অনুষ্ঠানের জন্য ডাক আসতে শুরু করে দোহারের কাছে। একাধিক বাংলা ছবির জন্য গান বেঁধেছেন কালিকাপ্রসাদ। এরপর একদিন হঠাৎই হল উল্কাপতন! এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ইহলোক ত্যাগ করলেন কালিকাপ্রসাদ। ‘দোহার’ হারায় তার এক অভিভাবককে। সন্তানকে দুহাত দিয়ে আগলে ধরেন রাজীব। স্নেহের হাত ছিল কালিকা জায়া ঋতচেতার।
একে একে নানা ওঠা-পড়া, আলো-আঁধার, সুখ-দুঃখের মাঝে কেটে গিয়েছে কুড়িটি বছর। সেই ‘দোহার’ আজ একটি সফল লোকগানের দল। দেশবিদেশে অবিভক্ত বাংলার লোকসংস্কৃতি প্রদর্শনের পাশাপাশি নানা লোকশিল্প ও শিল্পীকে সকলের সামনে তুলে ধরা অথবা নতুন প্রজন্মকে হাতেকলমে তার শিকড়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো - এ সবই দোহারের কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত।
আগামী ৭ অগাস্ট ‘দোহার’ উদযাপন করতে চলেছে তার ২০ বছরের জন্মদিন। শিশির মঞ্চে আয়োজন করা হয়েছে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান, ‘দোহার ২০’। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে থাকছে দোহারের কুড়ি বছরের আড্ডা। আর দ্বিতীয় পর্বে বাংলার নানা উৎসব-পালা-পার্বণের নৃত্য-গীত সম্বলিত উৎসব-পরবের গীতি কথা –'বাংলার মুখ'। অংশগ্রহণে দোহার পরিবারের প্রায় ২৫ জন কলাকুশলী। এই গীতি-কথা ভারতের অন্যান্য শহরে দু-একবার হলেও কলকাতায় এই প্রথম। তা ছাড়া দোহারের কুড়ি বছরের উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে অগাস্ট-সেপ্টেম্বর জুড়ে একগুচ্ছ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়েছে দোহার। ‘দোহার ২০’ তার প্রথম পদক্ষেপ। কালিকা নেই- এ কথা মানতে নারাজ ‘দোহার’। মঞ্চে তিনি থাকেন সবসময়। আর তাঁকে কেবল দেখতে পায় ‘দোহার’ দল।...