সকাল সকাল যখন অফিসের জন্য রওনা দিলাম...২৪২ বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি বাস ৫ মিনিট দেরিতে ছাড়বে আজ| বাসে উঠলাম, বাস ছাড়ল… বাসটি স্ট্যান্ড ছেড়ে উদ্যান বাটী পেরিয়ে কাশিপুরের বি বি বাজারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, একটু যেতে যেতেই বাসে রোজকার মত ভিড় আর লোকেদের দৈনন্দিন যুদ্ধ শুরু| আমি অবশ্য স্ট্যান্ড থেকেই বাসের উইন্ডো সিট টা পেয়েছিলাম| ইতিমধ্যেই আমি কিছু লক্ষ্য করলাম যা প্রতিদিন আমার চোখে পড়লেও হয়তো খেয়াল করি না| এইরকম অনেক কিছুই আমরা প্রতিদিন দেখি কিন্তু খেয়াল করি না| যেটা দেখলাম আজ সেটা হলো একটি বাচ্চা ছেলে ঠেলা গাড়িতে ফল বিক্রি করছে, বয়স সম্ভবত ১০ থেকে ১২| বাচ্চাটি যে খুব আনন্দের সঙ্গে এই কাজটি করে তা মনে হলো না, আবার তাকে যে কেউ বাধ্য করেছে কাজটি করতে তাও মনে হলো না| তবে কেন? সে কি স্কুলে যায় না? তার মা বাবা নেই? তাঁরা কি ছেলেটিকে পড়াশোনা করাতে ইচ্ছুক নয়? নাকি বাচ্চা ছেলেটি নিজের ইচ্ছাতে এই কাজটি করছে? তাদের কি টাকার অভাব? নাকি শিক্ষার মূল্যবোধ নেই?
এই প্রশ্নগুলো নিমেষের মধ্যে মনের কোণায় উঁকি মারল... যার উত্তর জানা নেই| আমরা সবাই আমাদের ব্যস্ত জীবনে এইরকম ঘটনার সম্মুখীন হই কিন্তু ভাবার সময় নেই আমাদের| তবে একথা নিশ্চিত চাইল্ড লেবার বা শিশুশ্রম, আইন করে বন্ধ করা যাবে না এখানে| আমাদের নিজেদের সক্রিয় হতে হবে|
বাচ্চাদের কাজ করার বিরুদ্ধে ২০০২ সাল থেকে ১২ই জুন দিনটি 'ওয়ার্ল্ড ডে এগেইনস্ট চাইল্ড লেবার' হিসাবে পালন করা হয়, 'ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন' (ILO) দ্বারা এটি অনুমোদিত হয়| এই দিনটি সারা পৃথিবী জুড়ে পালন করা হয় কিন্তু বছরের বাকি ৩৬৪ দিন কি কেউ আদৌ ভাবে শিশুশ্রম নিয়ে...??
উত্তরটা আমরা সবাই জানি| কিন্তু সত্যিই কি আমাদের মধ্যে যদি এই ভাবনা জাগে যে আমরা কোনো অসহায়ের পাশে দাঁড়াব, বা ছোটবেলায় কাজের জগতে প্রবেশের থেকে বাচ্চাদের বাঁচাব, তাহলে বাচ্চাগুলিকে পড়াশোনা আর শিক্ষার দিকে এগিয়ে দিতে হবে| যদি আপনার হাতে সময় থাকে তাহলে আপনি এইরকম বাচ্চাদের নিজে পড়াতে পারেন| তবে সেটা সবার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে, কারণ এখন সবাই কিছু না কিছুতে ব্যস্ত| তাহলে অন্যভাবেও সাহায্য করা যেতে পারে। কোনো এনজিও-র সাহায্য নিয়ে অথবা সরাসরি পৌঁছে যেতে হবে এইসব বাচ্চাদের কাছে...আর সাহায্যের হাতটি বাড়িয়ে দিতে হবে...আমি বলছি না তাকে বা তার পরিবারকে টাকা দিয়ে সাহায্য করুন, কারণ তাতে আপনি যেটা করতে চাইছেন সেটা কতটা সফল হবে তার কোনো হদিস আপনি পাবেন না| তবে তাকে কোনো স্কুলে ভর্তি করিয়ে বা টিউশন ক্লাসে ভর্তি করিয়ে দিন আর খোঁজ রাখুন সেখানকার শিক্ষকের কাছ থেকে যে বাচ্চাটি নিয়মিত সেখানে যাচ্ছে কিনা| এটি আপনি একটা কল করেই জানতে পারবেন আপনার সাহায্যটি ঠিক জায়গায় পৌঁছাচ্ছে কিনা|