শিবের নীলকন্ঠ হওয়ার কাহিনি শ্রবণের মাহাত্ম্য জানতে ক্লিক করুন ছবির লিঙ্কে
সকল দেবতার মধ্যে দেবাদিদেব মহাদেব হলেন নীলকন্ঠ। মহাদেবের মন্ত্রের মধ্যেও তাঁকে নীলকন্ঠ রূপে সম্বোধিত করা হয়েছে। কিন্তু দেবাদিদেব মহাদেবের নীলকন্ঠ হবার কারণ কী তা অনেকেই জানেন না। শিবের নীলকন্ঠ হবার কারণ বিস্তারিত ভাবে আলোচিত হয়েছে শিব পুরাণের দশম অধ্যায়ে। আজ সেই বিষয়টিই বিস্তৃতভাবে আমি ব্যাখ্যা করব।
একদিন সকল দেবতাদের সামনে বায়ু দেব "নীলকন্ঠায় নমঃ" বলে মহাদেবকে প্রণাম করেন। এই কথা শুনে বালখিল্যাদি মুনিগণ বায়ু দেবকে জিজ্ঞেস করেন, " হে বায়ুদেব আপনি শিবকে নীলকন্ঠ বললেন কেন ? দেবাদিদেব মহাদেব কখন কীভাবে নীলকন্ঠ হলেন? একথা খুবই গুহ্য। এই কথা আমরা শুনতে চাই। সমগ্র ত্রিভুবনের মধ্যে আপনি একমাত্র সর্বত্রগামী। বায়ুই জীবন, বায়ু ছাড়া প্রাণ ও বাক্যের প্রকাশ হয় না। আপনি মানুষের বর্ণ স্থানে গত হলেই বাক্যস্ফূর্তি হয়। এমনকি বচনের অতীত লোকে আপনি গমন করেন। অতএব আপনি এই পাপনাশক ও মঙ্গলাত্মক গুহ্যকথা আমাদের কাছে বিস্তারিত বলুন।" মুনিদের প্রশংসা বাক্যে খুশি হয়ে বায়ু দেব তখন শিবের নীলকন্ঠ হওয়ার কারণ বলতে শুরু করেন।
বায়ুদেব জানান যে, ব্রহ্মার মানসপুত্র ধর্মাত্মা বশিষ্ঠ শিবপুত্র দেবসেনাপতি কার্তিকেয়কে এই কথা জিজ্ঞেস করলে বশিষ্টের উত্তরে কার্তিক যা বলেছিলেন তাই আমি আপনাদের বলছি। একদিন কৈলাস পর্বতে উপবিষ্ট মহাদেবকে দেবী পার্বতী জিজ্ঞেস করেন," হে প্রভু আপনার কন্ঠে নীল মেঘ খন্ডের ন্যায় কি বিরাজ করছে আপনার কন্ঠ এই রূপ নীল বর্ণ কীভাবে হলো তা আমায় বলুন।"
দেবী পার্বতীর প্রশ্নের উত্তরে মহাদেব বলতে শুরু করেন, "পূর্বে দেবতা ও অসুরেরা একসাথে মিলিত হয়ে ক্ষীরোদ সমুদ্র মন্থন করতে শুরু করলে সেই সমুদ্র মন্থনের ফলে প্রথমে ভয়ঙ্কর হলাহল অর্থাৎ বিষ উত্থিত হতে থাকে। সেই দেখে দেবতা এবং অসুরেরা ভীত হয়ে পড়লে তারা ব্রহ্মার কাছে এসে সমস্ত বিষয় খুলে বলেন। দেবগণ ব্রহ্মাকে জানান যে, সমুদ্র মন্থনের ফলে কালকূট নামে যে ভয়ঙ্কর বিষ উত্থিত হয়েছে অবিলম্বে তার প্রতিকার না করলে সেই বিষের প্রভাবে সমগ্র জগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই দেব কুল ও অসুর কুল একত্রিত হয়ে আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। "
এই কথা শুনে ব্রহ্মা দেবাসুরদের সাথে মিলিত হয়ে মহাদেবের কাছে এসে তার স্তব করতে শুরু করেন। তারা সকলে মিলে বলতে শুরু করেন, " হে বিরুপাক্ষ, হে দিব্যচক্ষুঃ, তুমি সর্বদা হাতে পিনাক ধারণ করে থাকো তোমাকে নমস্কার।" সকলের একত্রিত স্তবে প্রসন্ন হয় মহাদেব ব্রহ্মাকে বলেন, " হে ব্রহ্মণ, হে ভগবান, আমার দ্বারা আপনার কি কার্য সাধিত হবে? " তখন ব্রহ্মা সমুদ্র মন্থনের ফলে উত্থিত হওয়া সেই কালকূট বিষের কথা ও তার প্রভাবে সমগ্র জগতের বিনাশের সম্ভাবনার কথা বললেন। এই কথা শুনে দেবাদিদেব মহাদেব সমগ্র জগৎকে উদ্ধার করার জন্য সেই তীব্র বিষ পান করেন।
বিষপান করবার পর ব্রহ্মা মহাদেবকে বলেন এই বিষপান আপনার কণ্ঠের শোভাবর্ধন করেছে এবং তিনি দেবাদিদেব মহাদেবকে প্রথম নীলকন্ঠ নামে সম্বোধন করেন। শিব পুরাণে বর্ণিত আছে যে শিবের এই নীলকন্ঠ নাম যারা উচ্চারণ করে তারা সকল বিষের প্রভাব থেকে মুক্ত হয় ও তাদের জীবনের সকল অশুভ শান্তিতে পরিণত হয়।
নীলকন্ঠ হওয়ার কারণ বর্ণনা করার পর দেবাদিদেব মহাদেব পার্বতীকে বলেছিলেন যে, যে ব্যক্তি আমার নীলকন্ঠ হওয়ার কাহিনী ভক্তি সহকারে শ্রবণ করে সে আমার প্রসাদে নন্দী তুল্য বল লাভ করে সেও ঐহিক ও পারত্রিক জীবনে শান্তি লাভ করে এবং দেহের অন্তে রুদ্রলোকে গমন করে।