মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান ও এলাহাবাদে শাহী স্নানের কথা বাংলার অধিকাংশ মানুষ জানলেও অনেকেই এইটা জানেননা, এই মকরসংক্রান্তি তিথিতেই পালিত হয় আরেকটি বিশেষ উৎসব যার নাম ‘টুসু উৎসব’। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ছাড়াও উড়িষ্যা, ধানবাদ, রাঁচি, হাজারীবাগ প্রভৃতি জায়গায় পালিত হয় এই কৃষিভিত্তিক উৎসব টুসু । এই উৎসবের প্রথম নামকরণ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা না গেলেও শোনা যায়, 'তুষ' কথা থেকেই উৎপত্তি এই শব্দের। মতান্তরে, মধ্যপ্রাচ্যের প্রজনন দেবতা 'টেষুব' থেকে এই উৎসবের নামকরণ হয়েছে টুসু। একমাসব্যাপী এই টুসু উৎসব শুরু হয় অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে এবং চলে পৌষ সংক্রান্তি পর্যন্ত। এই উৎসবের রীতি অনুযায়ী, ধানের ক্ষেত থেকে আনা হয় নতুন আমন ধান। গ্রামের অবিবাহিত মেয়েরা একটি পাত্রে চালের গুঁড়ি ছড়িয়ে তারপর সেই পাত্রে রাখা হয় তুষ। সেই তুষের উপর একের পর এক ধান, গোবর, দূর্বা, আলো চাল, আকন্দ ফুল প্রভৃতি দিয়ে লাগানো হয় একটি হলুদ রঙের টিপ্। সেই টিপ্ পরিহিত পাত্রটিকে টুসু দেবী হিসাবে রাখা হয় পিঁড়ির উপরে। সম্পূর্ণ এই পাত্রটিই প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা কুমারী রূপে পূজিত হন দেবী টুসু। গ্রামের কুমারী মেয়েরা প্রতি সন্ধ্যেবেলা টুসু দেবীর নিকটে জমায়েত হয়ে তাদের বিভিন্ন সামাজিক অভিজ্ঞতার কথা সুর করে গানের আকারে দেবীর কাছে বর্ণনা করেন। দেবীর উদ্দেশ্যে মুড়ি,ছোলা, বাতাসা প্রভৃতি ভোগ উৎসর্গ করা হয়ে থাকে। পৌষ সংক্রান্তির ভোরবেলায় কাগজের তৈরী সুসজ্জিত চতুর্দোলায় করে গান গাইতে গাইতে দেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জনের উদ্দেশ্যে। বিসর্জনের পর মেয়েরা নদীর জলে স্নান করে নতুন বস্ত্র পরেন এবং ছেলেরা পাট, খড়, কাঠ প্রভৃতির সমন্বয়ে এক বিশেষ প্রকারের ঘর তৈরী করে তাতে আগুন লাগান। এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হল টুসু সংগীত যার মূল বিষয়বস্তু লৌকিক ও দৈহিক প্রেম। এই গানের মাধ্যমে গায়িকারা তাদের সামাজিক, মানসিক বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলেন। এই গানের মাধ্যমেই প্রচারিত হয় নারী শক্তি, মেয়েলি কলহ, ঈর্ষা, সামাজিক রাজনীতি প্রভৃতির কথা। হবেই প্রতি বছর এক মাস ব্যাপী টুসু পর্ব পালন করার পর পৌষ সংক্রান্তির দিন টুসু কে বিদায় দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয় জলে বা নদীতে|