অন্ধকেশ্বর শিবলিঙ্গের পৌরাণিক মাহাত্ম্য জানেন কী?

দেবাদিদেব মহাদেবের সম্পর্কে জানার আগ্রহ ভক্তদের চিরকাল। তিনি ভোলেবাবা, তাঁর অপার করুণা, সামান্য বেল পাতাতেই তিনি তুষ্ট! শিব পুরানে উল্লেখিত আছে যে, ঋষিরা সূতকে শিবের বিভিন্ন লিঙ্গের কথা এবং সেইসকল লিঙ্গের মাহাত্ম্য কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন এবং সূত ও ধৈর্য সহকারে সেই সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। শিব পুরাণের একবিংশতি অধ্যায়ে অন্ধকেশ লিঙ্গের মাহাত্ম্য কথার বর্ণনা আছে।

ঋষিরা সূতকে অন্ধকেশ লিঙ্গের মাহাত্ম্য কথা জানতে চাইলে, সূত তখন বললেন, হিরণ্যাক্ষ অসুরের অন্ধক নামে এক দৈত্য পুত্র ছিল। এই দৈত্য পুত্র ব্রহ্মার আরাধনা করে দুর্লভ বর প্রাপ্ত হয়েছিলো। বহু বছর তপস্যা করে ব্রহ্মা তার আরাধনায় তুষ্ট হয়ে তাকে বর দিতে চাইলে সে ব্রহ্মার থেকে এক অভিনব বর চেয়েছিলো, সে  বর চেয়েছিলো যে,“আমার মধ্যে বিবেকের উদয় হলে তখন আমার দেহ ব্রহ্মান্ড স্বরূপ হবে অর্থাৎ আমি ব্রহ্মতুল্য হবো তখন আমার জীবন থাকবে না। তা না হওয়া পর্যন্ত আমি জীবিত থাকব।”

ব্রহ্মার কাছ থেকে এই বর লাভ করবার পরে সে ব্রহ্মাকে প্রণাম করে ত্রিলোক বিজয় করতে উদ্যত হলো। এরপর সে স্বর্গে গমন করে দেবতাদের জয় করল। সে দিকপালদের বশীভূত করলে দেবতারা স্বর্গ ত্যাগ করে মন্দার পর্বতে আশ্রয় গ্রহণ করলেন ও সেখানেই তারা বহু সময় কাটাতে লাগলেন। অন্ধক যখন জানতে পারল দেবতারা মন্দর পর্বতের লুকিয়ে আছেন তখন সে নিজের সকল সৈন্য নিয়ে মন্দর পর্বতে গেল। সেখানে দেবতা ও দানবদের মধ্যে একটি ঘোরতর যুদ্ধ হলো সেই যুদ্ধে দৈত্য-দানবগন সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হলো তখন অন্ধক নৈঋত সমুদ্রের কাছে একটি গর্ত খনন করে তার মধ্যে প্রবেশ করলো। এই গর্তটি কিন্তু বিশাল একটি গর্ত ছিলো এর মধ্যে ত্রি যোজন বিস্তৃত এক নগর ছিলো এবং সেখানে অন্ধক  দৈত্যদের সাথে বসবাস করত।

 

Andhkeshwar1

অন্ধক মাঝে মাঝে সেই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতো এবং প্রজাদেরকে পীড়ন করতো এবং প্রজাদেরকে পীড়ন করবার পর আবার সেই গর্তে প্রবেশ করত। মহাবলশালী অন্ধক এইভাবেই দিনযাপন করতে থাকল, দেবতারা এই সমস্ত কথা জানতে পেরে অত্যন্ত দুঃখিত হলেন কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না, কারণ ব্রহ্মার দেওয়া বর অনুযায়ী অন্ধকের মধ্যে বিবেকের উদয় না হওয়া পর্যন্ত সে জীবিত থাকবে। তাই তারা সকলে মিলে যুক্তি করে একদিন দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে গিয়ে সকল কথা খুলে বললেন।

মহাদেব তখন অন্ধকের বিষয়ে সমস্ত কথা শুনে দেবতাদের সৈন্য আনতে বললেন এবং তিনি নিজেও তাদের সঙ্গে গমন করলেন। দেবতাদের সৈন্যরা অন্ধকের সেই গর্ত আক্রমণ করলে অন্ধক তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে যুদ্ধ করতে লাগলো একসময় মহাদেবের সাথে যুদ্ধে অন্ধক গর্ত মধ্যে প্রবেশ করার উপক্রম করতেই মহাদেবের দ্বারা তাড়িত করলেন। এইসময় অন্ধকের বিবেকের উদয় হল।

অন্ধক সেই অবস্থায় মহাদেবের চিন্তা করতে লাগলেন, “অন্তকালে তোমার দর্শন লাভ করলে তোমার তুল্য হওয়া যায়”

দেবাদিদেব শিব অন্ধকের এই স্তুতি শুনে প্রসন্ন মনে বললেন, “বর প্রার্থনা করো আমি বরদান করব।”

 অন্ধক তখন তাকে বললেন, “হে দেবেশ যদি আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে থাকেন তাহলে আমাকে এই বরদান করুন যে আপনার প্রতি আমার ভক্তি যেন অবিচল থাকে। এখন যে বর লাভ করছি পরজন্মেও যেন তাই  থাকে।”  অতি অল্পে তুষ্ট হওয়া মহাদেব তখন অন্ধকের এই কথা শুনে ‘তথাস্তু’ অর্থাৎ ‘তাই হোক’ বলে অন্ধককে গর্তে নিক্ষেপ করলেন এবং নিজেও লোক হিতের জন্য সেই গর্তে রয়ে গেলেন দৈত্য সকল বিনষ্ট হলো এবং জগতের মঙ্গল সাধিত হল।  দেবতারাও নির্বিঘ্ন ভাবে আবার নিজ নিজ স্থানে বাস করতে থাকলেন। ভগবান শিব সেই থেকে অন্ধকেশ্বর নামে খ্যাত ও পূজিত হলেন। শিব পুরান এ উল্লেখিত আছে যে, যে ব্যক্তি এই লোকভয়নাশক অন্ধকেশ্বর শিবের উপাসনা করেন ছয় মাসের মধ্যেই তার মনের অভীষ্ট পূর্ণ হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...