মহাকালেশ্বর লিঙ্গের উৎপত্তি কথা জানলে চমকে যাবেন!

দেবাদিদেব মহাদেবকে মহাকাল বলা হয়। কারণ তিনি সমগ্র কালচক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে, তিনি মুহূর্তেই প্রলয় আনতে পারেন আবার তাঁর শরণাগতদের চরম বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারেন। শিবের বিভিন্ন লিঙ্গের মধ্যে মহাকালেশ্বর শিব লিঙ্গের উৎপত্তি কথা আজকে আমি আপনাদের বলব। শিব পুরাণের জ্ঞান সংহিতার চতুর্বিংশতি অধ্যায়ে মহাকাল ওঙ্কারেশ্বরের উৎপত্তি কথা বিশদে বর্ণনা করা আছে। ঋষিরা যখন সূতের কাছ থেকে আরো জ্যোতির্লিঙ্গের কাহিনী শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করে তখন সূত মহাকালেশ্বর শিবলিঙ্গের উৎপত্তি কথা শোনায়। সূত বললেন, সকল মানুষের মুক্তি দানকারী একটি নগর আছে যার নাম অবন্তী। সেখানে একজন ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ বাস করতেন, তিনি সব সময় বেদ পাঠ করতেন ও বেদে উল্লিখিত কর্ম করতেন। তিনি নিয়মিত ভক্তিসহকারে শিবের পুজো করতেন ও পার্থিব শিবলিঙ্গের পুজো করতেন।

সম্যক জ্ঞানী সেই ব্রাহ্মণ সকল কর্মের ফল লাভ করেন ও মৃত্যুর পর সদ্গতি লাভ করেন। এই ব্রাহ্মণের চারটি পুত্র ছিল। জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল দেবপ্রিয়,দ্বিতীয় পুত্রের নাম ছিল প্রিয়মেধ, তৃতীয় পুত্রের নাম ছিল সুবৃত, চতুর্থ পুত্রের নাম ছিল সুব্রত‌। এই সকল পুত্ররাই বেদে উল্লিখিত সকল কর্ম করতেন। তারাও তাদের পিতার মত শিবভক্ত এবং শিব পরায়ন হয়ে উঠেছিলেন। পিতার মতো তাদের কাছেও ধর্ম ছিল একমাত্র আশ্রয়। তাদের শরীর ও মন শুক্লপক্ষের চন্দ্রকলার মত ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সমস্ত অবন্তীনগরী তাদের তেজে ব্রহ্মতেজময়ী হয়ে উঠল।

 

Mahakaleshwar1

সেই সময় রত্নামাল পর্বতে দূষণ নামে একজন মহা অসুর ছিল। সেই মহা বলবান দৈত্যরাজ সব সময় ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব পোষণ করতো এবং সমস্ত জগতকে তুচ্ছ জ্ঞান করত। বহুবছর তপস্যা করে সে ব্রহ্মার বর প্রাপ্ত হয়ে এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যে নিজেকে অপরাজেয় ভেবে সে সমস্ত বেদ ও স্মৃতিশাস্ত্র সহ সকল ধর্ম নষ্ট করতে শুরু করে। কোথাও যখন আর বেদধর্ম অবশিষ্ট ছিল না, তখন ওই দুরাত্মা অসুরের নজর পড়ে অবন্তীনগরের ওপর। সে তার বহু দৈত্য সেনাকে সঙ্গে করে নিয়ে অবন্তীনগর আক্রমণ করে।

অসুর দূষণ তার দৈত্য সেনাদের বলে, "হে দৈত্যগণ এই দুষ্ট ব্রাহ্মণরা কি আমার কথা শুনবে না? আমি সকল দেবগন ও রাজগণকে বশীভূত করেছি এই ব্রাহ্মণকে কি জয় করতে পারবো না?"

দৈত্যরাজ দূষণ তখন ব্রাহ্মণগণকে গিয়ে বলল "যদি প্রাণে বাঁচতে চাও তো দেব ধর্ম ও যাগযজ্ঞ পরিত্যাগ কর। তা না হলে জীবনের আশা ত্যাগ কর" এরপর চারজন মহাবল দৈত্য নগরের মধ্যে ব্রাহ্মণদের এই ঘোষণার কথা জানাতে চারিদিক ছুটে গেল। সেই সময় নগরের মধ্যে যেন প্রলয়কাল এসে উপস্থিত হল। কিন্তু অবন্তীবাসী ব্রাহ্মণগণ দৈত্যদের এই কথা শুনে এতোটুকু দুঃখিত হলেন না, কারণ তাঁরা ছিলেন শিবঞ্জ। তাঁরা মনে করলেন, শিবের নিকট এই দৈত্যগণ অতি সামান্য। এর মধ্যে সমস্ত অবন্তীনগরে দৈত্য সেনারা অত্যাচার শুরু করল। নগরবাসীগণ তখন প্রাণ ভয়ে ব্রাহ্মণদের সামনে এসে বলতে শুরু করলেন, "হে প্রভুগণ দৈত্য সেনারা বহুলোকের প্রাণসংহার করেছে এখন আমাদের কর্তব্য কী?"

 

Mahakaleshwar2

ব্রাহ্মণগণ তখন তাদের বললেন, "শত্রু সেনারা প্রচন্ড শক্তিশালী এমন সৈন্য বা অস্ত্রশস্ত্র নেই যা দিয়ে তাদের নিবারণ করতে পারি। তবে আশার কথা এই যে সর্বশক্তিমান সর্বশক্তিমান ভক্ত ও শরণাগত দের রক্ষা করবেন তিনি আজ আমাদের রক্ষা করুন। শিবলিঙ্গ ছাড়া আমাদের অন্য কোন রক্ষাকর্তা নেই" এইরকম দৃঢ়তা অবলম্বন করে সেই শিব ভক্ত ব্রাহ্মণগণ শিবের ধ্যান ও পুজো করতে লাগলেন তখন তারা ‌পূরক, কুম্ভক, রেচক দ্বারা প্রাণায়ামে রত হলেন। সেই সময় দূষণ দৈত্য তাদের সেই অবস্থায় দেখে বলতে লাগল, এদের বন্ধন করো ও বধ কর।

কিন্তু ব্রাহ্মণগণ একাগ্রচিত্তে শিবের ধ্যান করতে থাকায় দূষণের কথা শুনতে পেলেন না। এমন সময় পার্থিব ও শিবলিঙ্গের পূজা স্থলে এক বড় গর্ত হলো। সেই গর্ত থেকে দুর্গতদের রক্ষাকর্তা মহাকাল আবির্ভূত হলেন। তারপর সেই দেবাদিদেব মহাদেব দৈত্য সেনাদের উদ্দেশ্যে বললেন, "ব্রাহ্মণদের কাছে আসিস না দূরে চলে যা।" এই বলে তিনি হুংকার ছেড়ে দূষণকে ভর্ৎসনা করতে লাগলেন তারপর সেই পূজা স্থলে দূষণকে তার তেজ দ্বারা ভষ্মীভূত করলেন। সূর্যোদয়ে অন্ধকার যেভাবে বিনষ্ট হয়ে যায় তেমনি ভাবে দূষণের দৈত্যসেনাগণ সকলে ভয়ে পালিয়ে গিয়ে পরে বিনাশপ্রাপ্ত হলো। অবশিষ্টরা দূরে পালিয়ে গেলো। স্বর্গের দুন্দুভি বাজতে লাগলো, পুষ্পবৃষ্টি হতে লাগলো। তখন ব্রাহ্মণগণ আনন্দিত হয়ে বললেন, "হে প্রভু আপনাকে লোক রক্ষার জন্য এখানে থাকতে হবে। আমাদের মুক্তি দান করুন।"

দেবাদিদেব মহাদেব তখন ব্রাহ্মণদেরকে মুক্তি দান করে সেই গর্তের মধ্যে মহাকালেশ্বর লিঙ্গ রূপে অবস্থান করতে লাগলেন। ব্রাহ্মণগণ মুক্তি লাভ করে সেই স্থানে শিবস্বরূপ হয়ে উঠলেন। শিব পুরাণে উল্লেখিত আছে যে, যে ব্যক্তি এই মহাকালেশ্বর লিঙ্গ দর্শন করে স্বপ্নেও তার কোন দুঃখ থাকে না এবং তার সকল কামনা সিদ্ধ হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...