মানুষের মনে প্রশ্নের কোনো শেষ নেই। কিন্তু একটা প্রশ্ন সবার মনে কোনো না কোনো সময় একবার হলেও উঁকি দিয়েছে ,আর তা হলো এই পৃথিবীর শেষ কোথায়? যেমন সমুদ্রের সামনে দাঁড়ালে মনে হয় এর শেষ কোথায়? এই সব নানা অজানা প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধিৎসু মন খুঁজেই চলে। তবে জানেন কি পৃথিবীর শেষ শহর কোনটি? সেই প্রশ্নের উত্তর জানাবো।
ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর শেষ প্রান্তের খোঁজ পেয়েছেন। বিজ্ঞানীদের মতে, ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট সাসেক্স বা রাশিয়ার সাইবেরীয় অঞ্চলের ইয়ামান পেনিনসুলা বা চিলির কেপহর্ন পৃথিবীর শেষ প্রান্ত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। তবে জানেন কি পৃথিবীর শেষ শহর কোনটি? আর্জেন্টিনায় অবস্থিত উশুইয়াকে ‘তিয়েরা দেল ফুয়েগো' বা পৃথিবীর শেষ প্রান্তের শহর বলা হয়ে থাকে। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী এই শহরটির নামের যথার্থতা আছে, কারণ দক্ষিণ আমেরিকার এক্কেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এটি। কিন্তু হঠাৎ এই নামের কারণ কি ?
জানা যায় ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ নাবিক ম্যাগেলান সমুদ্র অভিযানে বেরিয়ে আচমকাই চলে আসেন আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরের সংযোগকারী এক প্রণালীতে। রাত্রিবেলা এই দ্বীপের বিভিন্ন অংশে আগুন জ্বলতে দেখে তিনি অনুমান করেন , এটি পৃথিবীর দক্ষিণ প্রান্তের শেষ। তখন তিনি এই দ্বীপ বেষ্টিত শহরের নামকরণ করেন ‘তিয়েরা দেল ফুয়েগো' বা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত। পরবর্তীকালে এই প্রনালীরটির নাম হয় তাঁর নামেই - ম্যাগেলান প্রণালী। আর্জেন্টিনার উশুইয়ার আয়তন প্রায় ২৩ বর্গ কিলোমিটার। শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৫৭ হাজার। আর পৃথিবীর কি না শেষ শহর!! তা দেখতে ক্রমাগত এটি বেশ আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠছে।
পাহাড় পরিবৃত এই শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশ এতটাই মনোরম যে গ্রীষ্মকালেও ঠান্ডা থাকে , সঙ্গে প্রায়শই বৃষ্টিপাত। তাছাড়া সামুদ্রিক সিগাল দেখতে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে । এছাড়া মেরিটাইম যাদুঘর যা এন্ড অফ দা ওয়ার্ল্ড মিউসিয়াম নামেই পরিচিত তাও বেশ জনপ্রিয়। এখানকার লাইট হাউসটিও বেশ বিখ্যাত কারণ এটাই পৃথিবীর দক্ষিণ প্রান্তের শেষ লাইট হাউস। এর পর আন্টার্কটিকার পথে আর কোনো লাইট হাউসের সাক্ষাৎ মিলবে না। এখানকার অধিকাংশ মানুষের আয়ের প্রধান উৎস পর্যটনশিল্প। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম জাহাজ তা সে ব্যবসা-বাণিজ্য বা পর্যটন যাই হোক না কেন। এখানকার ক্রূজ শিপ পিয়ারটি আন্টার্কটিকার ক্রূজিঙ এর প্রবেশদ্বার। যাইহোক পৃথিবীর শেষ শহরের খোঁজ পাওয়া গেলেও এক চমৎকার সাইনবোর্ড লাগানো এখানে,যা ইন্সপায়ারিংও বটে। লেখা উশুইয়াকে ' Ushuaia, end of the world , beginning of everything ‘ অর্থাৎ যেখানে শেষ সেই থেকেই শুরু। আবার একটু ঘুরিয়ে বললে পৃথিবীর শুরুটাও এখান থেকে। কথাটার মধ্যেই কিন্তু শ্লাঘা নেই , আছে নতুনের প্রতি , জীবনের প্রতি এক চরম সার্থক , সদর্থক ইঙ্গিত।