মুর্শিদাবাদ জেলার দেখার জিনিস, খাবার জিনিস, পরবার জিনিস – সবই ফেমাস। মোটামুটিভাবে একশোটা পর্ব লিখলে একটু আধটু বর্ণনা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সে কি আর সম্ভব? তাই এই পাঁচটা পর্ব লিখেই মোটামুটি ভাবে আপনাদের দেখানো বা বেড়ানোর বা বোঝানোর চেষ্টা করছি।
মুর্শিদাবাদ শহরের আর একটি দর্শনীয় বস্তু হল জাহানকোষা কামান। "জাহানকোষা" অর্থাৎ পৃথিবীজয়ী। এই কামানের গায়ে খোদাই করা লিপি থেকে জানা যায় মুঘল সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে সুবেদার ইসলাম খাঁর নির্দেশে ১৬৩৭ খ্রীষ্টাব্দে বিশালাকার এই কামানটি তৈরি করেছিলেন জনার্দন কর্মকার নামে একজন লৌহশিল্পী। কামানটি অষ্টধাতুর তৈরি। আজ পর্যন্ত এর গায়ে জং ধরেনি।
আছে কাঠগোলা বাগান, নিমকহারাম দেউড়ি এবং কাটারা
মসজিদ। বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের বাড়ির মূল দরজার নাম লোকমুখেই হয়ে গেছে নিমকহারাম দেউড়ি।
কাটারা মসজিদে রয়েছে মুর্শিদকুলি খানের সমাধি। তিনি নাকি চেয়েছিলেন কোনো মসজিদে যেন তাকে সমাধিস্থ করা হয়। মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শণ কাটরা মসজিদ। মুর্শিদাবাদ রেল স্টেশনের পূর্ব দিকে দেড় কিলোমিটার দূরে কাটারা মসজিদ অবস্থিত। কাটরা মানে হচ্ছে বাজার। মসজিদটি একটি বাজারের কাছেই অবস্থিত তাই হয়ত এর নাম কাটারা মসজিদ। নিয়মিত শত শত দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন মসজিদটি দেখতে।
কাটরা মসজিদের প্রবেশ দ্বারের নিচে একটি ছোট্ট ঘরে রয়েছে মুর্শিদকুলি খানের সমাধি। এটি নবাব মুর্শিদকুলি খানের শেষ ইচ্ছা অনুসারে করা হয়েছিল। তিনি তার জীবনে যতো অন্যায় কাজ করেছিলেন তার জন্য শেষ জীবনে অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং তিনি এমন এক স্থানে সমাহিত হতে চেয়েছিলেন, যেখানে তিনি মসজিদে প্রবেশকারী পুণ্যবান মানুষদের পদস্পর্শ পাবেন।
মুর্শিদাবাদ জেলার এ তো গেল নবাবী স্থাপত্যের কথা। এবার আসি মন্দিরের কথায়। বহরমপুর শহর থেকে সামান্য দূরে ভাগিরথীর অপর তীরে আজিমগঞ্জ। এই আজিমগঞ্জে রয়েছে রাণী ভবানী প্রতিষ্ঠিত চারবাংলার মন্দির। তিনশো বছরের ও বেশি পুরনো মুখোমুখি চারটি শিব মন্দির। মন্দিরের গায়ে অপূর্ব টেরাকোটার কাজ। এর একটু দূরেই আছে রাজরাজেশ্বরী (মা দুর্গা) মন্দির। এর পাশাপাশি বহু পুরনো বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে যেগুলির বয়স সাড়ে তিনশো বা চারশো বছর। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এত সুন্দর মন্দিরগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চারবাংলা মন্দিরের ঠিক উল্টোদিকে ভাগিরথী নদীর একটি বাঁক রয়েছে যেটা দেখলে আপনি মুগ্ধ হবেনই।
মুর্শিদাবাদ জেলার সারগাছিতে রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশনের অন্যতম প্রাচীন কেন্দ্র সারগাছি আশ্রম৷ ১৮৯৭ সালে (বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠার ও আগে) এই আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়৷ সেই সময় স্বামী অখণ্ডানন্দ এই আশ্রমের সূচনা করেছিলেন৷
এছাড়াও রয়েছে বহরমপুর শহরের কাছাকাছি কিরীটেশ্বরী মন্দির। এই মন্দিরে নাকি সতীর কিরীট অর্থাৎ মাথার মুকুট পতিত হয়েছিল। হিন্দুদের কাছে অতি পবিত্র এবং পুণ্য স্থান এই মন্দির।
এবার একটু খাওয়া দাওয়ার আলোচনায় আসা যাক। বুঝলেন পাঠকবন্ধুগণ, এই ব্যাপারে এই নিবন্ধ লেখিকার ভারি আগ্ৰহ। আপনাদেরও নিশ্চয়ই ভাল ভাল খাবার জিনিসের গল্প মন্দ লাগবে না!
মুর্শিদাবাদের মিষ্টির কোনো তুলনা নেই। শুধু মিষ্টির জন্যই এই জেলার জয়গান গাওয়া যেতে পারে। প্রথমেই আসি বহরমপুরের ছানাবড়া নিয়ে। এই প্রসঙ্গে একটুখানি ব্যক্তিগত কথা বলে ফেলি? এই আর্টিকেল লিখিয়ের এক অতি ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ার বাড়ি বহরমপুরে। তাই সেখানকার সেরা দোকানের শ্রেষ্ঠ ছানাবড়া চেখে দেখার সুযোগ এই অতি সৌভাগ্যবতী লেখিকার হয়েছে। সে আর কী বলব পাঠকবন্ধুরা! ছানা এবং চিনি... ঘিয়ে ভাজা সেই মিষ্টির স্বাদ ... অমৃত কোথায় লাগে।
এবারের পর্ব এখানেই শেষ করি? পরের পর্বে মুর্শিদাবাদ জেলার বাকি সব সেরা খাবার এবং পরার মানে সিল্ক শাড়ি ও বাকি জিনিসপত্র নিয়ে আলোচনা করা যাবে কেমন?