জেলার নাম মালদহ - পর্ব ৬

আবার আজ মালদা জেলার ইতিহাসের খোঁজে আমরা বেরিয়ে পড়েছি। চলুন আজ আমরা যাব মালদহ জেলার প্রসিদ্ধ এবং বিখ্যাত #জহরা_মন্দিরে বা জহরা কালীবাড়িতে।

মালদা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ইংরেজবাজার থানার রায়পুর গ্রামের আমবাগানের মধ্যে তিনশো বছরের ঐতিহ্যবাহী এই জহুরা বা জহরা মায়ের মন্দির। ইতিহাসের পাতা উল্টালে জানা যায় যে এই কালীমন্দির সম্পর্কে প্রচলিত আছে নানান কিংবদন্তী। কেউ কেউ বলেন রাজা বল্লালসেন তাঁর রাজত্বকালে তাঁর রাজ্যে বেশ কয়েকটি মন্দির নির্মাণ করান।

Malda-article2

সেই মন্দিরগুলির একটিই হলো এই জহুরা মন্দির। আবার মন্দিরের গায়ে পাথরের ফলকে যে তথ্য লিখিত রয়েছে তার থেকে জানা যায় প্রায় ৩০০ বছর আগে উত্তরপ্রদেশের এক সাধক স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবী মা জহুরার পুজো শুরু করেন। দেবী কালীর এক রূপ দেবী চণ্ডিকা। উত্তরপ্রদেশের সেই সাধক এখানে একটি গড়ের ওপর দেবী জহুরা চণ্ডীর বেদি স্থাপন করেছিলেন।

পরবর্তীকালে হীরারাম তিওয়ারি নামের আরেক সাধক দিব্যদর্শনে দেবীর রূপ দেখতে পান। কিন্তু দেবীর এই মূর্তি প্রচলিত দেবী মায়ের মূর্তিগুলির মতো নয়। এখানে লাল রঙের একটি ঢিবির ওপর রয়েছে একটা মুখোশ। ঢিবির দু’পাশে রয়েছে আরও দু’টি মুখোশ। গর্ভগৃহে রয়েছে শিব আর গণেশের মূর্তি। বৈশাখ মাসের শনিবার এবং মঙ্গলবার দেবী জহুরা বা জহুরা চণ্ডিকার পুজো শুরু হয়।

সেই সময় থেকেই এপার বাংলা ও ওপার বাংলার ধর্মপ্রাণ মানুষ এই পুজোতে অংশ নিতেন। এমনকী কথিত আছে সেই তিনশো বছর আগে এই অঞ্চলে গভীর জঙ্গল থাকায় ডাকাতেরাও এই দেবীকে পুজো করে ডাকাতি করতে যেত।

Malda-article1

সারা বছর ধরেই মায়ের মন্দিরে ভক্তরা পুজো দিলেও বৈশাখ মাসের মঙ্গল ও শনিবার থাকে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। তখন ভক্ত সমাগম অনেক বেশি হয়। মালদা জেলার বিখ্যাত এই মন্দিরে পুজোর সময়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন।

এই পুজোর বৈশিষ্ট্য হল, অন্যান্য কালীমন্দিরের মতো রাত্রিবেলা কোনও পুজো এখানে হয় না। সব পুজোই হয় দিনের বেলায়, সূর্যের আলো থাকাকালীন। কেবলমাত্র শনি আর মঙ্গলবারেই পুজো হয়।

কারুর কারুর মতে অনেক আগে দেবী জহরার পূর্ণাবয়ব বিগ্রহ ছিল এখানে। বিধর্মীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পুরোহিতরা সেই মূর্তিকে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছিলেন। পরে এই লাল রঙের মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল।

অবশ্য এমন মতও প্রচলিত রয়েছে যে তিন শতাধিক বছর আগে খুব ঘন জঙ্গল ছিল এই অঞ্চলে। বহু মানুষের বিশ্বাস, এই দেবী এক সময়ে ছিলেন ডাকাতদের আরাধ্যা। এখানে দেবী মায়ের পুজো দিয়ে ডাকাতরা ডাকাতি করতে যেত।

Malda-article3

ডাকাতি করে প্রচুর ধনরত্ন আনত, তারপর সেগুলোকে এখানেই মাটির তলায় পুঁতে রাখত। সেই ধনরত্নের ওপরই দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ধনরত্নকে হিন্দিতে বলে ‘জওহর’। দেবীমূর্তির নীচে প্রচুর ধনরত্ন রাখা থাকত বলেই এখানে দেবী চণ্ডী ‘জহরা’ কালী বা ‘জহুরা চণ্ডী' নামে প্রসিদ্ধ হয়েছেন।

এখনো জহুরা মা'র প্রতিষ্ঠা মাস উপলক্ষ্যে বড় মেলা বসে বৈশাখ মাসে। মূল মন্দিরটি লালচে গেরুয়া রঙের পঞ্চরত্ন ধাঁচের। চারপাশে গাছ গাছালি ঘেরা, সাদা আর লাল রঙের প্রশস্ত বারান্দাযুক্ত এই মন্দিরের পরিবেশটি ভারী সুন্দর। কথিত আছে, অত্যন্ত জাগ্রত এই দেবী মায়ের কাছে কোনো ভক্ত কোনও কিছুর জন্য প্রার্থনা করলে মা অবশ্যই তাঁর ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন।

ভাল লাগল তো জহুরা মায়ের মন্দিরে এসে? এবার কি ঘুরতে ঘুরতে একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন পাঠক বন্ধুরা? কোনো চিন্তা নেই। পরের পর্বে আসছি সেই সব ভাল ভাল জিনিসের খবর নিয়ে মানে কিনা মালদার বিখ্যাত মিষ্টির এবং আমের খোঁজ খবর নিয়ে....

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...