মালদহ বা মালদা জেলা নিয়ে আরেকটি পর্ব নিয়ে চলে এলাম আজ পাঠকদের কাছে।
এই মালদহ জেলার সূচনা পর্বে লিখেছিলাম আধুনিক মালদহ জেলা তৈরির ইতিহাস। এবার একটু পুরনো দিনের কথা আলোচনা করি?
চলুন পাঠক, টাইম মেশিনে চড়ে পিছিয়ে চলে তাই ষষ্ঠ বা সপ্তম শতাব্দীতে। একটুখানি ফিরে তাকাই ইতিহাসের দিকে...
একসময় অতি সমৃদ্ধ ছিল প্রাচীন বাংলার এই অঞ্চল। বিশিষ্ট দার্শনিক পাণিনির লেখায় 'গৌড়পুরা' নামের একটি জনপদের উল্লেখ আছে। ইতিহাসবিদদের মতে খুব সম্ভবতঃ এই প্রাচীন গৌড়পুরা আর বর্তমান মালদহের গৌড় একই স্থানে অবস্থিত ছিল। এর বিস্তৃতি ছিল প্রাচীন গৌড় থেকে পাণ্ডুয়া পর্যন্ত। এই পাণ্ডুয়ার পূর্ব নাম ছিল পুণ্ড্রনগর বা পুণ্ড্রবর্ধনপুর যা এখন বাংলাদেশের অন্তর্গত।
বর্তমান বাংলাদেশের মহাস্থানগড় নামের এক অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত এক শিলালিপি থেকে জানা যায় যে এই গৌড়নগরী এবং পুণ্ড্রবর্ধনপুর একসময় প্রাচীন মৌর্য্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে যা গুপ্ত রাজাদের আমলে তাদের অধিকারে চলে যায়। সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর প্রায় তিন দশক গৌড় সম্রাট শশাঙ্কের শাসনাধীন ছিল।
প্রবল পরাক্রমী হিন্দু রাজা শশাঙ্কের রাজধানী ছিল গৌড়-পুণ্ড্রবর্ধনপুরে। সংস্কৃতির ধারক নন্দদির্ঘিক মহাবিহার ছিল এই গৌড়পুরাতেই । বিক্রমশীলা বা নালন্দার মতো এই মহাবিহারও ছিল বিদ্যাচর্চার আদর্শ কেন্দ্র৷ তখন গৌড়ে ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং হিন্দু ধর্মের প্রাধান্য। আবার অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে গৌড়ের শাসনভার পাল রাজাদের হাতে চলে যায়। একাদশ শতক পর্যন্ত পাল রাজাদের শাসনাধীন ছিল গৌড়। পাল সম্রাটরা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের উপাসক এবং পৃষ্ঠপোষক। এই পাল রাজাদের সময়ে গৌড়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে।
পাল সাম্রাজ্যের পতনের পর উত্থান ঘটে সেন সাম্রাজ্যের। সেন রাজারা কিন্তু হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তাঁদের সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল। সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণসেনের নামানুসারে গৌড়ের নাম হয় লক্ষণাবতী।
১২০৪ খ্রীষ্টাব্দে বখতিয়ার খিলজীর কাছে পরাজিত হন লক্ষণসেন। পতন ঘটে সেন সাম্রাজ্যের। শেষ হয় হিন্দু শাসকদের প্রাধান্য।
এরপর গৌড়ের শাসনভার চলে যায় মুসলমান শাসকদের হাতে। মধ্যযুগ সমকালীন গৌড়ের সুলতানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নাম হলো ইলিয়াস শাহ, ফারুক শাহ, সিকান্দার শাহ এবং আলাউদ্দিন হুসেন শাহ। এরই মাঝে কিছুদিন গৌড় শাসন করেছিলেন হিন্দু রাজা গণেশ।
এরপর আফগান যোদ্ধা শের শাহ সুরী এই গৌড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তা পুনরুদ্ধার করেছিলেন বাবর পুত্র হুমায়ূন। এই গৌড় নগরীর আম খেয়ে তিনি এতোটাই তৃপ্ত হয়েছিলেন যে গৌড় নগরীর নাম পাল্টে রেখেছিলেন "জন্নতাবাদ"..(জন্নত অর্থ স্বর্গ)।
মুসলিম শাসনকালে গৌড়ে যে সমস্ত স্থাপত্য নির্মিত হয়েছিল তার মধ্যে ফিরোজ মিনার, আদিনা মসজিদ, কোতোয়ালি দরজা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর ইংরেজরা বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে। সেই সময়ে কিন্তু মালদহ বা মালদা জেলার কোনো আলাদা অস্তিত্ব ছিল না।
আজ এই পর্যন্ত থাক পাঠক বন্ধুগণ? পরের সপ্তাহে নতুন নতুন তথ্য নিয়ে আসব আপনাদের কাছে।