ব্রোঞ্জ যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার

দীর্ঘ চার বছরের গবেষণার পর অবশেষে দেখা মিললো সেই দুর্মূল্য দৃশ্যের। অবশেষে মানুষের চোখের নাগালে এলো ব্রোঞ্জ যুগের কিছু অপূর্ব নিদর্শন। গত বৃহস্পতিবার গ্রিসের সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় থেকে জানানো হয়, গ্রীসে কেরো দ্বীপ এবং দাস্ক্যালিও দ্বীপের কাছেই খোঁজ মেলে বহুযুগ আগের এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের। জানা যায়, দীর্ঘ চার বছর ধরে সেখানে খনন কার্যের পর অবশেষে আসে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই খননকার্য করা হচ্ছিলো কেরো দ্বীপের ক্যাভস নামক একটি স্থানে এবং সেখানেরই দাস্ক্যালিও নামক এক ক্ষুদ্র দ্বীপে।

       এই খননকার্যের ফলে যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের দেখা মেলে তার মধ্যে কম হলো সেই যুগে তৈরী নানা ঘরবাড়ি এবং সেই সময়ের নানা স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ। এছাড়াও খনন কার্যের ফলে দেখা মিলেছে এমন একটি সিস্টেমের যা সেই সময়ের মানুষ ব্যবহার করতেন সমুদ্রের জলকে উপযুক্ত ভাবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে। সেই কাজে ব্যবহৃত হওয়া নানা টিউবজাতীয় জিনিসের খোঁজ মিলেছে মাটির নিচ থেকে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকদের দাবি,  যেসব সামগ্রী মাটির নিচ থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে ব্রোঞ্জ যুগের অর্থাৎ ২৭৫০ এবং ২৫৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ সময়ের মধ্যেকার।

      এই জায়গায় প্রাপ্ত নিদর্শন নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী প্রত্নতাত্ত্বিকগণ। তাঁরা জানান,  এর আগে এরকম একটি জায়গায় যে এতো বড় বসতি ছিল তা এই খননকার্য না করলে জানাই যেত না। সম্পূর্ণ লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছিলো এই বসতি। তারা জানিয়েছেন,  সেই সময়ের তুলনায় অনেকটা বেশি উন্নত ছিল এটি। এতো উন্নত এক সভ্যতা এতদিন বিজ্ঞানচক্ষুর আড়ালেই থেকে গেছিলো। সম্প্রতি এই খননকার্যের ফলেই তা সকলের সামনে উন্মুক্ত হলো। এই খননকার্যের ফলে জানা গেছে,  সেই সময় প্রতি ঘরবাড়ি এমনভাবে তৈরী হয়েছিল যাতে সমুদ্রের করাল গ্রাসের হাত থেকে তাদের বাঁচানো যায়। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার রুক্ষ আবহাওয়া থেকে সেই ঘরবাড়ি রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে ধাপে ধাপে তৈরী করা হয়েছিল।

         এই গবেষণায় থাকা প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকগণ জানিয়েছেন,  দাস্ক্যালিও-তে যেসব ঘরবাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে তা আসলে মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরী এই ধরণের আবিষ্কার প্রমান করে সেই সময়ের ভাস্কর্য্য শিল্পের অস্তিত্ব। তাঁরা জানান, এই খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত ঘরবাড়িগুলির নকশাই প্রমান করে সেই সময়ের শিল্পীদের গুণের কথা এবং সেই সময়ের শিল্পীরা কতটা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন এবং প্রতিটি ঘরবাড়ি তৈরীর আগে থেকেই তাঁরা এই নিয়ে পরিকল্পনা করে নিতেন, সেই কথাও জানা গেছে এই আবিষ্কারের পর। দেখা গেছে,  সেই সময়ের বাড়িগুলির বেশিরভাগটাই ছিল মনুমেন্টাল আকৃতির।

এতদিন মানবচক্ষুর আড়ালে থাকা এমন এক ঐতিহাসিক নির্দর্শন আবিষ্কারের পর যথারীতি খুশি সেই আবিষ্কারের সাথে জড়িত থাকা বিজ্ঞানীগণ। তাঁরা জানান, ভবিষ্যতে এইরকম আবিষ্কার বহুযুগ আগের নানা নিদর্শন আমাদের সামনে তুলে আনতে আরও সাহায্য করবে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...