‘প্রদুনোভা’। কটা বাঙালির জানা ছিল এই শব্দটা? রিও অলিম্পিকের আগে বাঙালির ‘ডিকশনারি’তে এই শব্দের কোনও অস্তিত্ব ছিল না বললেও ভুল হবে না। পরিচয় করিয়েছিলেন তিনি। এখন জিমন্যাস্টিক নিয়ে বাঙালি কিছু বুঝুক আর নাই বুঝুক প্রদুনোভা ভল্টটা খুব ভালো ভাবে জানে। সৌজন্যে দীপা কর্মকার।
অলিম্পিকে পদক মেলেনি খুব অল্প পয়েন্টের ফারাকে। কিন্তু তিনি বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন ফ্ল্যাট ফিট, আর কম উচ্চতা নিয়েও এক ভয়ংকর ভল্ট অলিম্পিকের মতো স্তরে দেওয়া যায়। বিশ্বজুড়ে প্রদুনোভা 'ভল্ট অব ডেথ' নামে পরিচিত জিমন্যাস্টদের কাছে। সামান্য এদিক ওদিক হলে বড় বিপদ হতে পারে। হতে পারে মৃত্যুও।
পা হাত দিয়ে ধরে জোড়া সমারসল্ট দিয়ে ল্যান্ডিং করাই প্রদুনোভা ভল্ট। ১৯৯৯ সালে রাশিয়ান জিমন্যাস্ট ইয়েলেনা প্রদুনোভা প্রথম এই ভল্ট দেন। তাই তাঁর নামেই এই ভল্টের নামকরন হয়। এই ভল্ট যিনি দেন তাঁর শরীর মাটিতে নেমে আসে ইটের মতো। নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই শক্ত। সেটা করেছিলেন দীপা।
চোটের জন্য দীপা হয়তো টোকিও যেতে পারেননি, কিন্তু তাঁকে কেউ ভুলেও যায়নি। আসলে দীপার ট্র্যাক রেকর্ড তাঁকে মানুষের মনে গেঁথে রেখেছে। অলিম্পিকের প্রথম ভারতীয় মহিলা জিমন্যাস্টকে ভোলা সহজ নয়।
১৯৯৩ সালের ৯ অগস্ট আগরতলার অভয়নগরে জন্ম দীপার। দীপার জিমন্যাস্টিক শেখা শুরু করেন ছ’বছর বয়সে। ১৪ বছর বয়সে জলপাইগুড়িতে আয়োজিত ‘জুনিয়র ন্যাশনাল’ জিমনাস্টিক্স প্রতিযোগিতায় প্রথম মেডেল জেতেন দীপা। ২০০৭ সালের মধ্যে জেতেন ৭৭ পদক। তারপর ২০১০ সালে কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয় দলে ছিলেন দীপা। ২০১১ সালে জাতীয় গেমসে আসে বড় সাফল্য। অলরাউন্ডের পাশাপাশি ফ্লোর, ভল্ট, ব্যালান্স বিম ও আনইভেন বারসে সোনা জেতেন। ২০১৪ সালে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম ভারতীয় মহিলা জিমন্যাস্ট হিসেবে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন দীপা।
২০১৫ সালে পান অর্জুন পুরস্কার। প্রথম ভারতীয় মহিলা জিমন্যাস্ট হিসেবে দীপাই অংশগ্রহণ করেন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। তুরস্কে ‘আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্স ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জ কাপ’-এ সোনা জেতেন। পদ্মশ্রী সম্মান পেয়েছেন ২০১৭ সালে।
টোকিও অলিম্পিকে নিজে পারেননি চোটের জন্য। তবে প্রণতি নায়েকদের শুভেচ্ছা জানান। পরামর্শ দেন অনুশীলনে চোট থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার। প্রণতিদের বলেছিলেন ভারতীয় মিউজিক পছন্দ করতে। তাতে জিমন্যাস্টিক দেখাতে ভারতীয়দের সুবিধা হয়।