সমাজকে দেখতেন নিজের চোখ দিয়ে

ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট নাট্যব্যাক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম নাট্যব্যক্তিত্ব দীনবন্ধু মিত্র। ১৮৩০ সালের নদীয়া জেলার চৌবাড়িয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। অস্বচ্ছল পারিবারিক অবস্থার মধ্যে যথেষ্ট প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে তিনি নিজের পড়াশুনা চালিয়েছিলেন। তিনি তাঁর পড়াশুনো জীবনে বহু বার বৃত্তি পান। বাংলা ভাষায় তাঁর যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। নাট্যজগৎ-এর ধারায় তিনি ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্তের সমসাময়িক। তিনি সাধারণত বাস্তবধর্মী নাটক রচনা করতেন। দীনবন্ধু মিত্রের লেখা প্রথম নাটক ‘নীলদর্পণ। তাঁর রচিত দ্বিতীয় নাটকটি হল ‘নবীন তপস্বিনী তাঁর লেখা দুটি প্রহসন হল 'সধবার একাদশী' এবং 'বিয়ে পাগলা বুড়ো'। তাঁর রচিত অন্যান্য নাটক গুলি হল 'লীলাবতী', 'কুঁড়ে' 'গোরুর ভিন্ন পাঠ', 'জামাই -বারিক', 'নবীন তপস্বিনী', 'কমলে কামিনী' প্রভৃতি।তিনি রায়বাহাদুর উপাধি পান। তাঁর 'নীলদর্পণ' নাটকটি ছিল বাংলা সাহিত্যে একটি খ্যাতনামা নাটক। নীলদর্পণ নাটকটিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

   তিনি সাধারণ মানুষদের নিয়ে নাটক লিখেছিলেন| দরিদ্র কৃষক, সমাজের নিম্নস্তরের মানুষদের নিয়ে ভাবতেন তিনি| তাদের দুঃখ-দুর্দশা তাঁকে পিড়িত করত| কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দীনবন্ধু মিত্র ছাত্রাবস্থা থেকেই সংবাদ প্রভাকর,  সাধুরঞ্জন পত্রিকায় কবিতা লিখতে শুরু করেন| তৎকালীন নাট্যব্যক্তিত্ব মধুসূদন দত্তের সমসাময়িক দিনবন্দু মিত্র,  মাইকেল প্রবর্তিত পৌরানিক বা ঐতিহাসিক নাট্যরচনার দিকে না গিয়ে সামাজিক বাস্তবধর্মী নাট্যরচনায় মনোনিবেশ করেন| তিনিই হয়ে ওঠেন পরবর্তীকালের নাট্যকারদের পথপ্রদর্শক| তিনি ছিলেন সমাজকল্যাণ বিষয়ক নাট্যকার| কৃত্রিমতার বিরোধী এবং সত্যের অনুসারী ছিলেন তিনি| জীবন সম্বন্ধে গভীর বাস্তব অভিজ্ঞতার দ্বারা তিনি কল্পনাশক্তির ন্যুনতম বিষয়কে পূরণ করেছিলেন| তীক্ষ্ন সমাজদৃষ্টি, জীবন্ত চরিত্রসৃষ্টি এবং মানবিক সহানুভূতি তাঁর সৃষ্টিকে অমর করে রেখেছে| ১৮৭৩ সালের ১লা নভেম্বর তিনি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।       

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...