তাঁকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল ' ভালো অভিনয়ের' রহস্য কী? উত্তর দিয়েছিলেন ' শের আউর শায়েরি'। শিক্ষিত অভিনেতা বলতে যা বোঝায় তিনি ছিলেন তাই। তাই দিয়েই হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় ছবির 'রোম্যান্স আইকন'। দিলীপ কুমার। দিলীপ সাব। কারও কাছে দেবদাস আবার কারও কাছে শুধুই সেলিম।
১৯৪০ সালে বাবার সঙ্গে মত বিরোধে বাড়ি ছাড়লেন ইউসুফ। চলে আসেন পুনেতে। পকেটে মাত্র ৮০ টাকা। প্রথমে একটি রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের চাকরি পান। তারপর আর্মি ক্যান্টিনের ম্যানেজার হন।
সুন্দর চেহারা আর ইংরেজি অ্যাকসেন্টের জন্য জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সেখানেও। অফিসার্স ক্লাবে স্যান্ড উইচের কাউন্টার খুলে ভালই রোজকার করতেন। ক্লাবের অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ বিরোধী বক্তব্য রেখে একদিনের জেল হয়েছিল। একরাত স্বদেশীদের সঙ্গে অনশনও করেছিলেন।
চাকরি খুঁজতে গিয়ে এক চিকিৎসকের সূত্রে পৌঁছে গিয়েছিলেন বম্বে টকিজ স্টুডি য়োতে। খোদ দেবিকারানির চেম্বারে! সেখান থেকেই বদলে গেল ভাগ্য।
বারশো টাকা মাসিক বেতনে চাকরি পেলেন অভিনেতার চাকরি। দেবিকারানির কথাতেই বদলে গেল নাম ।
ইউসুফ খান হয়ে উঠলেন আমজনতার ‘দিলীপ কুমার’।
প্রথম বড় হিট ১৯৪৭-এর ‘জুগনু’। তারপর মেলা, নদীয়া কে পার, শহীদ, আন্দাজ, বাবলু দিদার… লম্বা হতেই লাগল তাঁর ছবির তালিকা।
অশোক কুমার তাঁকে পরিচয় করান মেথড অ্যাকটিং-এর সঙ্গে। তাঁর কাছেই পেয়েছিলেন মাটিতে পা রেখে চলার শিক্ষা। কথা, অভিনয় আর স্টারডম এই তিন গুণ মিলেই তিনিই তিনি হয়ে উঠেছিলেন দর্শকদের চোখে অনন্য। দেবদাস, সেলিম, আনন্দবাবু, সাগিনা মাহাতোকে কুর্নিশ জানিয়েছিল দর্শকরা। পাঁচ দশকের বেশি অভিনয় জীবনে নিজেই হয়ে উঠেছিলেন এক প্রতিষ্ঠান।
তাঁর নাম উঠেছিল গিনেস বুক অফ রেকর্ডসে। একজন ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। নিজের সময়ে ছিলেন হায়েস্ট পেইড অ্যাক্টর।
উর্দু কবিতা আর সাহিত্য চর্চা জীবনের অঙ্গ ছিল। পর্দার মহাতারকা এই পরিচয়ের অন্তরালে সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন কবি সত্ত্বাকে। বই পড়তেন শিশুর মতো। সাহিত্য সমৃদ্ধ করেছিল অভিনেতা সত্ত্বাকে। তৈরি হয়েছিল সমাজকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা। সেই জন্যই ট্র্যাজিক দৃশ্যে অমন প্রাণ ঢেলে অভিনয় করতে পারতেন। বই আর ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকের ক্যাসেট তাঁর বাড়ির দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। গাইতে পারতেন, কিন্তু মনে করতেন ভাল শ্রোতা হওয়াটা আরও বেশি জরুরি।