ক্যান্সারের পরই যে রোগটির প্রকোপে মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন তা হলো ডায়াবেটিস। ক্যান্সারের মত দূরারোগ্য নয়, নিয়ম মেনে জীবনযাপন করলে ডায়াবেটিস অনেটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তবে অনেক মানুষ রয়েছেন যাঁদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ইনসুলিনের সাহায্য লাগে। নানা নিয়ম মানা সত্ত্বেও অনেকসময় ডায়াবেটিসের কবলে পড়ে জীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে রোগীদের। এই সময় রোগীদের শুনতে হয় নানা ভ্রান্ত কথা। অনেকক্ষেত্রেই শুনতে হয় ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা নাকি রক্তদান করতে পারেন না। সমাজ এইসমস্ত ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করার ফলে রোগীকে অনেকদিক থেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
আজ আলোচনা করব সেইসব ভ্রান্ত ধারণাগুলি সম্বন্ধে এবং তার সঙ্গেই জেনে নেব সঠিক তথ্য-
১) ‘ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তদান করতে পারে না’ -চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। ডায়াবেটিসের সাথে রক্তদান করার কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য যাঁরা ইনসুলিন নিয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে রক্তদান করা সমস্যার হতে পারে। বাকিদের ক্ষেত্রে যদি রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক থাকে তাহলে সে নির্বিঘ্নে রক্তদান করতে পারবে।
২) অনেকেই মনে করেন ইন্সুলিন যাঁরা নেন, তাঁরা সঠিক জীবনযাপন করেন না। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা অতি দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। সে ক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই রোগীদের ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। তাই ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়ার অর্থই বেহিসাবি জীবনযাপন নয়।
৩) বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মনে করা হয়, ডায়াবেটিস ধরা পড়লে স্টার্চ বা শর্করাজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। বহুযুগ আগে থেকেই চলে আসছে এই ধারণাটি। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন অন্য কথা। তাঁরা জানাচ্ছেন স্বাভাবিক ডায়েটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এই স্টার্চ বা শর্করাজাতীয় খাবার। তাই খাদ্যতালিকা থেকে শর্করা সম্পূর্ণ বাদ না দিয়ে শর্করার পরিমান কমিয়ে দেওয়া উচিত।
৪) ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষদের মিষ্টি খাওয়া একেবারে বারণ! কিন্তু চিকিৎসকেরা এক্ষেত্রেও জানাচ্ছেন অন্য কথা। তাঁরা জানাচ্ছেন, পরিমিত পরিমান মিষ্টি সকলেই খেতে পারেন। এর সাথে ডায়াবেটিসের কোনো সম্পর্ক নেই। অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া সকলের পক্ষেই খারাপ। তাই চিকিৎসকরা সকলকেই অল্প মিষ্টি খাওয়ার কথা বলেছেন। তাতে বরং মন ভালো থাকে।
৫) ডায়াবেটিস নিয়ে আরেকটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, ডায়াবেটিস রোগীদের খুব কম পরিশ্রম করা উচিৎ। কিন্তু কথাটি ঠিক নয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সঠিকভাবে জীবনযাপন করলে একজন ডায়াবেটিস রোগীও বাকিদের মতোই পরিশ্রম করতে পারবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমান যদি ঠিক থাকে তাহলে কোনো সমস্যাকেই সমস্যা বলে মনে করার প্রয়োজন নেই। একজন ডায়াবেটিক পেশেন্টও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে। প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা যদি সরিয়ে ফেলা যায় তাহলে তাঁদের উপর থেকে কিছুটা হলেও দূর হতে পারে অযথা দুঃশ্চিন্তার মেঘ।