বায়ুমণ্ডলে হিরে। এমন কথা শুনতে রুপকথা মনে হলেও এটা সত্যি। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, পৃথিবীর উত্তাপ কমাতে পারে হিরের ধূলিকণা। জলবায়ু সঙ্কট কমানোর এক গবেষণায় এমনই এক তথ্য উঠে এসেছে, যা রূপকথার গল্পকেও হার মানাবে।
হাইলাইটসঃ
১। পৃথিবীর উত্তাপ কমাতে পারে হিরের ধূলিকণা
২। এর জন্য প্রয়োজন বছরে ৫০ লক্ষ টন হিরের গুঁড়ো
৩। এই পরীক্ষায় খরচ হতে পারে প্রায় ২০০ লক্ষ কোটি ডলার
‘জিয়োফিজ়িক্যাল রিসার্চ লেটার্স’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, বছরে ৫০ লক্ষ টন হিরের গুঁড়ো বিশ্বের তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। উজ্জ্বল হিরের গুড়ো বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত থাকলে, সেটি সূর্যরশ্মিকে প্রতিফলিত করবে। এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসবে। যদি এই পরীক্ষা সফল হয়, তবে বিশ্বের তাপমাত্রা প্রায় ২.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট অবধি কমতে পারে। তবে এই গুড়ো মাত্র একবার নয়, বরং দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে ছড়াতে হবে। সেকারণে এই পরীক্ষা অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ।
বিজ্ঞানীদের অনুমান অনুযায়ী দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে হিরের গুড়ো ছড়ানোর জন্য খরচ হতে পারে প্রায় ২০০ লক্ষ কোটি ডলার। কিন্তু এই পরীক্ষা যেহেতু অনুমানসাপেক্ষ, তাই এই বিশাল পরিমাণে খরচসাপেক্ষ প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ রয়েছে বিজ্ঞানী মহলে।
উল্ল্যেখিত এই প্রক্রিয়াটি ‘স্ট্রাটোস্ফিয়ারিক অ্যারোসল ইঞ্জেকশন’ নামে পরিচিত। যেটি ‘সোলার জিয়োইঞ্জিনিয়ারিং’-এর অন্তর্গত। এই গবেষণার মূল উদ্দ্যেশ্য ছিল, বায়ুমণ্ডল থেকে সূর্যালোককে প্রতিফলিত করে বাইরে পাঠানো এবং তাপ শোষণকে নিয়ন্ত্রণে আনা।
তবে বায়ুমণ্ডলের দূষণ মোকাবিলা করতে হিরের ধূলিকণার পাশাপাশি সালফার-সহ অন্যান্য আরও অ্যারোসল নিয়েও গবেষণা চালাচ্ছিলেন ওই গবেষকেরা। কিন্তু গবেষনায় প্রমাণ হয়, হিরের কণাগুলি জমাট বাঁধা প্রতিহত করতে এবং সবচেয়ে বেশিক্ষণ উঁচুতে ভেসে থাকতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি, অন্যান্য অ্যারোসোল অ্যাসিড বৃষ্টিতে পরিণত হলেও হিরের ধূলিকণা তা এড়িয়ে গিয়েছে। তবে জমাট বাঁধার দিক দিয়ে সালফার হিরে গুঁড়োর ভাল ব্যবহারিক বিকল্প হতে পারে। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ার ডগলাস ম্যাকমার্টিন জানিয়েছেন, সালফারের দাম এবং তার অ্যারোসল তৈরির খরচ কম হওয়ায় এই উপাদানও ব্যবহারের কথাও বিবেচনা করবেন বিজ্ঞানীরা।
যদিও এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, এই ধরনের পরীক্ষা করার ফলে পৃথিবীতে পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব কতটা পড়বে তা দেখে নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান সময়ে মানুষ দ্বারা ঘটিত পরিবেশ ধ্বংসলীলা যে বীভৎস আকার ধারণ করেছে তা মোকাবিলা করার জন্য এমন অবাস্তব পরীক্ষা বাস্তবায়িত করা যেতেই পারে।