চারদিক ঝলমল করছে আলোয়। আচমকা নেমে এল ঘুটঘুটে অন্ধকার। দুম করে নিভে গেল সব আলো। মিশমিশে আঁধারে কিচ্ছু দেখা যায় না।
হাতড়ে-হাতড়ে বোঝার চেষ্টা কোথায় কী আছে। মাত্র কয়েকটা মুহূর্ত। তার মধ্যেই অস্থির হয়ে উঠি আমরা। কখন ফিরবে আলো?
চোখ সয়ে গেলেও এ অন্ধকারটা অসহ্য। তারপরই আসে ছমছমে ভয়। ভয়টা যখন কামড়ে ধরতে শুরু করেছে মাথার মধ্যে, ঠিক তখন শোনা যায় শান্ত একটা স্বর। কেউ একটা যেন স্টিক এগিয়ে দেয়।
আলো আসে না, একজন মানুষ আসে। বাকি জার্নির জন্য পথ চলা শুরু।
অন্ধকারের রাজ্যে অনুভূতির সংলাপ- কেমন হয়, সেই অভিজ্ঞতাকেই সাধারণের তুলে ধরছে হায়দরাবাদের একটি রেস্তোঁরা। নাম ‘ডায়ালগ ইন দ্য ডার্ক’।
জন্ম থেকেই যারা জ্যোতিহীন। ছুঁয়ে-ছুঁয়ে যাদের বেঁচে থাকতে হয়। স্পর্শই যাদের একমাত্র চেনার দিশা। ঠিক কেমন ভাবে তাদের জীবন। কীভাবেই বা দিন যাপন করেন তাঁরা- সেই ভাবনা থেকেই গড়ে উঠেছে ‘ডায়ালগ ইন দ্য ডার্ক’।
ইন্টারনেটে সার্চ করলে রেস্তোঁরাটির নাম পাওয়া যায়। ছবিও মেলে। কিন্তু রিভিউ দেখতে গেলে মেলে অমোঘ এক বাক্য, ‘জীবন বদলে দেওয়া অভিজ্ঞতা’।
রেস্তোঁরায় পা রাখলে প্রথমেই ঘড়ি, মোবাইল ইত্যাদির মতো জিনিসগুলো জমা রাখতে হয়। রেস্তোঁরার ভিতরে সবই অন্ধকার। গাইডের সাহায্যেই সব কিছু। ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই সাহায্যের জন্য চলে আসে।
বসার ব্যবস্থাও অন্ধকারের মধ্যেই। কত পা এগোলে টেবিল-চেয়ার, কীভাবে বসতে হবে সবটা বলে দেওয়া হয়। এমনকি টেবিলে প্লেট রাখা আছে কীভাবে সেটাও কানে শুনে তবেই হাত বাড়াতে হবে। খাওয়া-দাওয়া তিন কোর্সের। ভেজ-ননভেজ দু’ধরনের খাবারই পাওয়া যায়। স্টার্টার, মেইন কোর্স, ডেসার্স্ট।
খাবার কেমন দেখতে, কী বস্তু চোখে দেখা যায় না। অন্ধকারের মধ্যে সব কিছু অনুভবে বুঝে নিতে হয়।
রেস্তোঁরার ভিতরের কর্মীরা সকলেই দৃষ্টিহীন। গাইড থেকে শুরু করে সকলেই। এই রেস্তোঁরায় খেতে এসে অনেকেই কর্মীদের জিজ্ঞাসা করেন তাঁরা পারেন কী করে। ওঁরা উত্তরে শুধু বলেন, ‘অভ্যাস হয়ে গিয়েছে’।
অন্ধকার ওঁদের হারাতে পারে না। কালো আঁধারকে হারিয়ে প্রতিদিন জয়ী হয়ে ওঠা আসলে ঠিক কতটা চ্যালেঞ্জের তা বুঝতে এখানে কাটানো কয়েকটা ঘন্টাই যথেষ্ট। অন্ধকারকেই যে ওঁরা আলোয় বদলে ফেলেছেন! তাই অন্য আলঅর দরকার ওঁদের হয় না। দৃষ্টিবানদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ওঁরা অনুভবের দৃষ্টিতে।