সিংহের পিঠে দেবী দুর্গা

দেবী দুর্গা শক্তি রূপিনী। বরাভয় দায়িনী। দুষ্টের দমন করে সৃষ্টের পালন করেন। তিনি ‌মর্ত্যে শুধু একা আসেন না। সঙ্গে থাকে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক আর গণেশ। দেবীর সঙ্গে বাহন হিসেবে থাকে পশুরাজ সিংহ।

বিভিন্ন দেবতা দুর্গাকে বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্রে সজ্জিত করার পর হিমালয় দুর্গাকে বাহন হিসেবে দেন সিংহকে। চণ্ডীগ্রন্থে দেবীর বাহন সিংহকে "বাহনকেশরী", "ধূতসট" প্রভৃতি বিশেষণে বিশেষিত করা হয়েছে।

সিংহ রজোগুণের অধিকারী। সেই সঙ্গে প্রচন্ড শক্তি ও উচ্ছ্বাসের প্রতীক। দেবী দুর্গা স্বয়ং অত্যন্ত বলশালী ও শৌর্যবর্তী। ফলে সিংহের মতো বলশালী প্রাণীকে নিজের আয়ত্বে রাখতে পারবেন। সেই থেকে সিংহ দুর্গার বাহন।

দুর্গার যেসব মূর্তি পাওয়া যায় তার দুটি রূপ মহিষমর্দিনী এবং সিংহবাহিনী। এরমধ্যে সম্ভবত মহিষমর্দিনী রূপটিই প্রাচীন। রাজস্থানের নাগোর থেকে পাওয়া আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকের একটি ক্ষুদ্রাকৃতি ফলককে মহিষমর্দিনী রূপের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে পণ্ডিতরা মনে করেন।

সিংহবাহিনী রূপটি সম্ভবত এসেছে ভারতের বাইরে থেকে। ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে যে মহিষমর্দিনী ও সিংহবাহিনী দেবীমূর্তির নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে সেগুলো খ্রিষ্টীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শতকের নির্মিত বলে মনে করা হয়। সিংহসহ মহিষমর্দিনী মূর্তি এসেছে সপ্তম শতাব্দী থেকে। বুদ্ধ যুগ হয়ে হিন্দু যুগের শুরুর দিকে মহিষমর্দিনী ধীরে ধীরে সিংহবাহিনী হয়ে উঠে।

বর্তমানে সিংহ ছাড়া দেবী দুর্গার মূর্তি কল্পনা করা যায় না। দেবীর সঙ্গে তাঁর বাহনও বাঙালির আপনজন হয়ে উঠেছে। তাই বিজয়ার দিন মায়ের মিষ্টি মুখ করানোর সঙ্গে সঙ্গে তাকেও মিষ্টি মুখ করানোর হয়। শুধু তাই নয়, সিঁদুর দিয়ে তারও বরণ করে ঘরের মা- মেয়েরা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...