অশুভ নাশে দেব দীপাবলি

গঙ্গার ঘাটে সার সার প্রদীপ। সিঁড়িতে সিঁড়িতে রঙ্গোলি। বাড়িঘর সাজানো আলোক মালায়। সন্ধ্যের অন্ধকার নদীর বুকে বয়ে যায় আলোর স্রোত। চোখ ফেরানো মুশকিল। প্রায় গোটা দেশের চোখ আটকে থাকে বারানসীর গঙ্গায়।

দীপাবলির ১৫ দিন পর ফের দীপাবলির আয়োজন। তবে আলোর এই উৎসবের নাম দেব দীপাবলি। মানে দেবতাদের দীপাবলি। কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে উত্তর ভারত বিশেষ করে বারানসীতে সাড়ম্বরে পালিত হয় দেব দীপাবলি উৎসব।

dev-dip-2

অমাবস্যায় দীপাবলি পেরিয়ে এসে কেন পালিত হয় এই দ্বিতীয় বারের দীপাবলি?

সেই কাহিনি জানতে হলে ফিরে যেতে হবে পুরাণ যুগে।

তিন অসুরভ্রাতা ছিলেন। তাঁরা ব্রহ্মাকে তপস্যায় সন্তুষ্ট করে তিনটি অভেদ্য এবং চলমান দুর্গ বরলাভ করেছিলেন। বিমানের মতো চলমান সেই দুর্গ বা ত্রিপুর নিয়ে নিয়ে তাঁরা ত্রিলোক ভ্রমণ করতে পারতেন। কেউ তাঁদের প্রতিহত করতে পারত না। ক্রমে হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য। দেবতারাও প্রবল পরাক্রমী তিন ভাইয়ের অত্যাচারের শিকার হন।

এই সমস্যার প্রতিকারে তাঁরা শিবের শরণাপন্ন হন। ব্রহ্মার বর অনুযায়ী, কার্তিক মাসের এই পূর্ণিমা তিথিতে যখন তিনটি দুর্গ আকাশপথে ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় আসে, তখন একটি মাত্র তীর ছুড়ে তা অসুর-সহ ধ্বংস করে দেন শিব।

dev-dip-1

তাঁর এই জয়ের উদযাপনে দেবতারা ভগবান শিবের স্থান কাশীতে নেমে এসে দীপাবলী পালন করেন দেবতারা। এই দিনে ভগবান শিব ত্রিপুরাসুরকে হত্যা করেছিলেন, তাই এটিকে ত্রিপুরী পূর্ণিমাও বলা হয়। কার্তিক পূর্ণিমার দিনে প্রদোষ কালে মহাদেব অর্ধনারীশ্বর রূপে ত্রিপুরাসুর বধ করেন।

অপর একটি কাহিনি বলে, ভগবান বিষ্ণুও কার্তিক পূর্ণিমায় মৎস্য অবতার গ্রহণ করেছিলেন। অশুভকে প্রতিরোধ করতে জন্ম হয়েছিল শুভ শক্তির। সেই কারণেই নাকি এই উদযাপন।

আষাঢ় শুক্লা একাদশী থেকে বিষ্ণু যোগ নিদ্রায় লীন থাকেন। তার পর কার্তিক শুক্লা একাদশীর দিনে তাঁর নিদ্রা ভঙ্গ হয়। বিষ্ণুর যোগ নিদ্রা থেকে জেগে ওঠার আনন্দে সমস্ত দেবী-দেবতা পূর্ণিমার দিনে লক্ষ্ণী-নারায়ণের মহাআরতী করেন, দীপ প্রজ্জ্বলিত করেন।

এই দিনে গঙ্গা-যমুনার ঘাটে দীপাবলি পালিত হয়। এই দিনে গঙ্গা স্নান করলে মোক্ষ লাভ হয়। নদীতে দীপ দান করলে দীর্ঘায়ু হওয়া যায়। পূর্বপুরুষরা মোক্ষলাভে শান্তি পায়। এই দিনে ভগবান বিষ্ণুর উপবাস ও পূজা করার বিধান রয়েছে। তুলসী বিবাহ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে আজকের দিনেই।  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...