বর্তমান সময়ে জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সবই হয় আপ-এর মাধ্যমে। যত দিন যাচ্ছে, মানুষ ততই সরাসরি বন্ধুত্বের বদলে মোবাইল নির্ভর হয়ে পড়ছে। এই যন্ত্রনির্ভরতার ফলে মানুষ একাও হয়ে পড়ছে। তাছাড়াও দিন দিন আমাদের জীবনধারার মান বদলাতে শুরু করেছে। প্রচন্ড দ্রুতগতির জীবন যাপন করছি আমরা। সব মিলিয়ে একাকিত্ব গ্রাস করছে আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষকে। একাকিত্বের সঙ্গে যুঝতে আমরা সক্ষম হতে পারছিনা। বাড়ছে মানসিক অবসাদ। ডিপ্রেশন গ্রাস করছে আমাদের। এমনও দেখা যাচ্ছে, ডিপ্রেশনে ভুগে অনেকে আত্মহত্যার আশ্রয় নিচ্ছে। অকালে ঝরে যাচ্ছে বহু তাজা প্রাণ।
সম্প্রতি জার্নাল অফ মেডিক্যাল ইন্টারনেট রিসার্চের একটি গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়েছে ইন্টারনেট নির্ভর, স্বচালিত বিভিন্ন থেরাপি প্ল্যাটফর্ম বা এপ্লিকেশন, মানসিক হতাশা, বিষন্নতা বা অবসাদ কাটাতে সত্যি কার্যকরী ভূমিকা নেয়। সেখানে দাবি করা হয়েছে আমেরিকান ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৪ হাজার ৭৮১ জনের ওপর করা(আগে থেকে করে রাখা) ২১টি সমীক্ষার পুনর্মূল্যায়ন করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। বিশেষ করে সিবিটি নির্ভর বিভিন্ন আপগুলির ওপরই জোর দেওয়া হয়েছিল। মানুষের বোধশক্তি ও আচরণগত সমস্যার চিকিৎসায় যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তাকে বলে কগনিটিভ বিহেভিওরিয়াল থেরাপি(সিবিটি)। এই পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট রোগীর চিকিৎসার ধরণ ও আচরণে সামান্য পরিবর্তন এনে অবসাদের লক্ষণগুলি নির্মূল করা হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রহণ করলে তাকে বলা হয় আইসিবিটি।
এইধরণের ইন্টারনেট নির্ভর আপ এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলি সত্যিই কাজ করে। আসলে আজকাল মনোরোগীর সংখ্যা এখন এতই বেড়ে গিয়েছে, সেই তুলনায় মানসিক ডাক্তার বা মনোবিদ সব সময় পাওয়া যায়না। এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে খরচ ও বেশ বেশি। সকলে তাই মনের অসুখের জন্য এত খরচ করতে চান না। সেখানে আইসিবিটি-র কোনো বিকল্প নেই। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে মনোবিদের সঙ্গে সামনা-সামনি বসে বা ওষুধ খেয়ে যে অসুখ সরানো সম্ভব, তা যদি আপ-এর মাধ্যমে আস্তে আস্তে হলেও সমাধান করা যায়, তাই বা মন্দ কি?