বাড়িতে পোষ্য রাখতে কার না ভালো লাগে? সারাদিনের পরিশ্রমের পর বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই যখন দেখা যায় ছোট্ট একটা প্রাণ দৌড়ে আসছে তখন নিজেকে সামলানো বেশ কঠিন। মনিবের সাথে পোষ্যের কিন্তু ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। ছোট বয়স থেকে মানুষ করতে করতে সেই পোষ্য ও মালিকের কাছে হয়ে ওঠে সন্তানসম। অনেক মানুষ আছেন যাদের সন্তান হয়নি। তাদের ক্ষেত্রে পোষ্য নিজের সন্তানের থেকে কম কিছু হয় না। সেই ছোট্ট পোষ্য তা সে সারমেয় হোক বা মার্জার বা অন্য কোনো প্রাণী, মালিকের কাছে থাকতে থাকতে তাকে ঘিরেই তার পৃথিবী বানিয়ে ফেলে। আপনার বাড়িতে যদি পোষ্য থাকে তাহলে আপনি ভালো রিলেট করতে পারবেন এর সাথে। দেখবেন, অনেক সময়েই হয় আপনি বাড়ি না ফেরা অব্দি না খেয়ে বসে থাকে আপনার আদরের পোষ্য। সেটা কি শুধুই সে মনিবকে ভালোবাসে তার জন্য? হয়তো না। কারণ তাদের মধ্যেও কাজ করে একধরণের উদ্বেগ। চলুন আজ পোষ্যদের এই উদ্বেগ নিয়ে কথা বলা যাক....
পোষ্যদেরও কিন্তু মানুষের মতোই ফিলিংস আছে। তারাও তার কাছের মানুষগুলোর জন্য চিন্তা করে আবার দুশ্চিন্তাও করে। তাই জন্যই আপনি বাড়ির বাইরে চলে গেলে মন খারাপ হয়ে যায় তার। কখনো দুশ্চিন্তাও হয় তার আপনার জন্য। তাই হয়তো সে খাবার খায় না। যাদের বাড়িতে পোষ্য আছে তারা সকলেই এই সিচুয়েশনের সাথে পরিচিত। মানুষের মতো পোষ্যরাও কিন্তু অবসাদে ভোগে যা তাদের ধীরে ধীরে রাগি এবং একগুঁয়ে প্রাণীতে পরিণত করে দেয়। তখন সে নিজের লোক বাদে আর কাউকেই চেনে না। আমরা অনেকক্ষেত্রেই দেখি রাস্তাঘাটেও এমন অনেক সারমেয় থাকে যারা মানুষ দেখলেই কামড়াতে চায়। তাদের কিন্তু এটা কোনো খারাপ স্বভাব নয়। এটা ওদের রোগ। ওরা সকলেই মানসিক অবসাদের শিকার। চলুন তাহলে আজ জেনে নিই আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার পোষ্য অবসাদে ভুগছে কিনা।...
১) বাড়িতে কোনো খারাপ ঘটনা ঘটলে সেই ঘটনার এফেক্টও কিন্তু পড়ে সেই পোষ্যের উপরে। সেই সময়ে সে সাময়িকভাবে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু এই না খাওয়ার ঘটনা যদি বেশি দিনের জন্য স্থায়ী হয় বা হঠাৎ করে যদি দেখেন তার খাওয়ার পরিমান বেড়ে গেছে তাহলে বুঝবেন আপনার পোষ্যের কোনো মানসিক সমস্যা ঘটছে।
২) সারমেয়রা মোটামুটি দিনে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা ঘুমায়। আর রাতে পাহারা দেয়। এটাই ওদের ধর্ম। কিন্তু যদি দেখেন আপনার পোষ্য দিন ও রাত মিলিয়ে একটু বেশিই ঘুমাচ্ছে তাহলে এখনই সচেতন হয়ে যান। কারণ মানসিক শান্তির জন্য আমরাও কিন্তু ঘুমটাকেই সেরা রাস্তা বলে বেছে নিই।
৩) আপনার পোষ্য যদি তার প্রিয় খেলনা বা খাবারের উপর থেকে আগ্রহ হারায় তাহলে অবিলম্বে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা জানান, অবসাদ তীব্র লেভেলে না পৌঁছানো পর্যন্ত কোনো পোষ্যই এরকম আচরণ করে না।
৪) আপনি সারাদিন পরিশ্রমের পর বাড়ি ফিরলেন কিন্তু আপনার প্রিয় পোষ্য আপনাকে দেখে মোটেই এগিয়ে এলো না। যেখানে বসে কি শুয়ে ছিল সেখানেই রয়ে গেলো। এক তো হতে পারে সে নিজেক মহারাজা মনে করছে। সেটা হলে তো ভালোই। কিন্তু এইটা যদি কারণ না হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে।
৫) সারমেয়দের মানসিক অবসাদের লক্ষণ কিন্তু ওরা নিজেরাই প্রকাশ করে দেয়। ওদের মানসিক অবসাদ যখন তীব্র আকার ধারণ করে তখন ওরা নিজেদের মন শান্ত করার জন্য নিজেদের হাতের ও পায়ের পাতা চাটতে শুরু করে। এতে ওদের স্ট্রেস রিলিফ হয়।
তাহলে আপনারা জেনে নিলেন, পোষ্যের মানসিক অবসাদ হলে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই এরকম কোনো লক্ষণ যদি নিজের পোষ্যের মধ্যে দেখতে পান তাহলে সময় নষ্ট না করে পোষ্যকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। পোষ্যরা কিন্তু আপনাকেই নিজের জগৎ মনে করে তাই ওদেরও ওদের প্রাপ্য ভালোবাসা টুকু দিন দেখবেন আপনার শরীরও সুস্থ থাকবে আর আপনার পোষ্যেরও।