টেলিভিশন আর প্রিন্ট মিডিয়ার পরিচিত মুখ সাংবাদিক শর্মিলা মাইতি সদ্য পা রাখলেন বইয়ের জগতে। ৪৩তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রকাশিত হলো শর্মিলার প্রথম বই 'দীপক টু দেব'। মেদিনীপুরের দীপক অধিকারীর অভিনেতা দেব হয়ে ওঠার পথ ঠিক কেমন ছিল সেই নিয়েই এই বই। দেব যখন প্রথম পা রাখেন টলিউডের মাটিতে তখন তাকে দেখে অনেকেই ছুঁড়ে দিত বক্রোক্তি "এ আবার হিরো নাকি!", তারপর সেই মানুষটিই যখন ২০০৯ সালে পা রাখছেন আই পি এল এর ইডেন গার্ডেনে তখন স্টেডিয়াম জুড়ে রব উঠেছে দেব-দেব, দেবের এই জার্নির নাম কি? "চ্যালেঞ্জ"।, আর এই মিশকালো রং আর চওড়া হাসির ছেলেটার গল্পের পাতাগুলোকে নিপুন হাতের ছোঁয়ায় জুড়ে ফেলেছেন লেখিকা। ফেসবুকে ট্রোল, সমালোচকদের ব্যঙ্গ বা নিজের অপারদর্শিতার খুঁটিনাটি, সমস্ত বাউন্সারই দেব সামলেছেন ক্রিজ কামড়ে পড়ে থাকা ব্যাটসম্যানের মতন আর সেই ঘটনাক্রমেরই ধারাভাষ্য দিয়েছেন শর্মিলা। বইয়ের পাতায় পাতায় উঠে এসেছে দেবের সঙ্গে লেখিকার সম্পর্কের নিবিড়তা, বন্ধুত্বটা যে একেবারেই পেশার বৃত্তের বাইরে গিয়ে তা বুঝে নিতে কোনো সমস্যা হয়না, বইয়ের বিষয়বস্তুও উঠে এসেছে আড্ডার ছলে। দেব চাননি ঠিক এখনই বইটি হোক তবে হয়তো শর্মিলার প্রতি বিশ্বাস ছিল, তাই তার আশা এই বই মানুষ ভালোবাসবে, কাছে টেনে নেবে আর ভবিষ্যতে এই বইয়ের আয়তন যে আরও বাড়বে সে বিষয়েও দেব নিশ্চিত। বইটি পড়তে গিয়ে কখনো মনে হয়েছে শর্মিলা দেবের জীবনী লিখছেন আবার কখনো মনে হয় যে না এতো দেব আর শর্মিলার স্বাক্ষাৎকারের লিখিতরূপ, কখনো এও মনে হয় যে না শর্মিলা নয় এই বইয়ের লেখক দেব নিজেই, লিখেছেন নিজের আত্মজীবনী। যে মানুষেরা প্রত্যেকদিন লড়ছেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, স্টেশনে রাত কাটাচ্ছেন, সস্তা হোটেলে পেট ভরিয়ে হাঁটা দিচ্ছেন গন্তব্যের দিকে এই বই তাদের জন্য, দেব তাদের প্রেরণা দেবেন এমন মানুষ হওয়ার জন্য যারা জীবনে যেকোনো রাস্তাতেই হাঁটুন না কেন সততার সাথে বাঁচবেন আর বিশ্বাস করবেন তার থেকে বড়ো আর কিছুই হয়না, আর একটা শিক্ষা এই বই থেকে নেওয়া উচিত দুটি ভিন্ন পেশার মানুষ তাদের পেশাগত জীবনে সাফল্যের সর্বোচ্চ্য শিখর ছুঁয়ে ফেললেও কিভাবে পা রেখে দিয়েছেন মাটিতে। তবে সার্বিক প্রকাশনার ব্যাপারে কয়েকটি কথা অবশ্যই বলা দরকার, বইটির প্রচ্ছদের ব্যাপারে আর একটু ভাবতে পারতেন লেখিকা, শর্মিলা নিজেই দারুন কার্টুন আঁকেন তাই যদি দেবের একটি কার্টুন প্রতিকৃতি এঁকে প্রচ্ছদে দিতেন বা অন্য কোনো ইলাস্ট্রেশন ব্যবহার করতেন সেটা আরও বেশি দৃষ্টিনন্দন হতে পারতো, হয়তো খুবই তাড়াহুড়োর মধ্যেই ছাপাতে হয়েছে এই বই তাই বেশ কিছু খুঁটিনাটির ব্যাপারে লেখিকা আর প্রকাশক হয়তো দৃষ্টিপাতের সময় পেয়ে ওঠেননি, তবে যাই হোক বইটির বিষয়বস্তু এতটাই সুন্দর আর মনোগ্রাহী আশা করবো পরের মুদ্রণে বইটি আরও সুন্দর রূপে ধরা দেবে পাঠককূলের কাছে।