বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের যত উপন্যাস আছে তার মধ্যে বেশ জনপ্রিয় চরিত্র দেবী চৌধুরানি, যারা পড়েন নি তারা মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের বিখ্যাত সিনেমার মাধ্যমে চরিত্রটির সাথে পরিচিত হতে পারেন । সাথে আরো একটি চরিত্রের কথা এড়ানো যায় না তা, আর তিনি ভবানী পাঠক। সেই দেবী চোধুরাণীর বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় মন্দির রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম জলপাইগুড়ি জেলায় শিকারপুর চা বাগানের মন্দিরটি। কিন্তু দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারের অম্বুজা আবাসন এলাকায় খানিক লোকচক্ষুর আড়ালেই আছে এমন এক মন্দির যার সাথে জড়িয়ে আছে দেবী চৌধুরানীর নাম। স্থানীয় মানুষ একে ভবানী পাঠক আর দেবী চৌধুরানির মন্দির বলেই চেনেন।
এই মন্দিরে পূজিতা হন মা কালী। জায়গাটা বেশ গা ছমছমে। জনশ্রুতি আছে, যে পাল-সেন যুগে নির্মিত এই মন্দিরটি ছিল ভবানী পাঠক এবং তাঁর বিদ্রোহী দলের ঘাঁটি। এই মন্দিরের পুজোতে দেবী চৌধুরানিও অংশ নিতেন। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ‘দেবী, আর ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘ডাকাত’ আখ্যা দিয়েছিল। এই মন্দিরে পুজো দিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সংগৃহীত খাজনা লুঠ করতে বেরোতেন ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানি। তারপর তা গরীবদের বিলিয়ে দিতেন । মন্দিরের প্রবেশপথে এবং মায়ের বেদিতে এখনও খোদাই করা আছে দেশপ্রেমের সেই মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র, “জয় ভারতবর্ষম্”। পুরোনো রীতি মেনে শ্যামাপূজার আগের দিন ভূত চতুর্দশীর রাতে প্রচুর ভক্ত সমাবেশে এখানে বাৎসরিক কালীপুজো হয়।
ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানির পরিচালিত বিদ্রোহের মূল কেন্দ্র উত্তরবঙ্গ হলেও দুর্গাপুরের এই মন্দিরের অস্তিত্ব কিছু প্রশ্নের উদ্রেক করে। কিন্তু এই যোগাযোগের কারণ হলো দেবী চৌধুরানির বাপের বাড়ি ছিল বর্ধমান। স্বামীর মৃত্যু হলে তিনি তাঁর বাপের বাড়িতেই ফিরে এসেছিলেন। মন্দিরের পাশে এখনো একটি গোপন সুড়ঙ্গ আছে।
তার প্রবেশ পথের মুখ এখনও দেখা যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, ইংরেজ আমলে বিদ্রোহীরা আত্মগোপনের জন্য সুড়ঙ্গটি ব্যবহার করতেন। আবার জল সরবরাহের কাজেও এই সুড়ঙ্গ ব্যবহার করা হত। মন্দিরের পেছনে একটি মজে যাওয়া সরোবর আছে। তার নাম ইছাই সরোবর। এক সময়ে এখানে জল ছিল। এই সরোবরের মাছ দিয়ে মা কালীর ভোগ রাঁধা হত। যদিও এখন মন্দিরে কেবল নিরামিশ ভোগই দেওয়া হয়। তবে এতো বছর পরেও সেই নামটি এখনো স্মৃতিতে জ্বলন্ত হয়ে আছে।