ওপেন চেস্ট বোলিং অ্যাকশন। আজকের জসপ্রীত বুমরার যেমন অদ্ভুত বোলিং অ্যাকশন ঠিক তেমনই ছিল তাঁর। যেমন গতি , তেমন সুইং। যেভাবে বলটা করতেন সেটা সম্পূর্ণ অন্য ধরনের। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের লোগোটাই তাই তাঁকে নিয়ে তৈরি করা হয়। এরকম ভারতীয় বোলার খুব কম এসেছে। ওড়িশা থেকে জাতীয় দলে খেলা প্রথম ক্রিকেটার। তারপরে শিবসুন্দর দাস। এরপরে আর কেউ আসেনি। তা এমন ছোট রাজ্য থেকে এক দুরন্ত প্রতিভা কাঁপিয়ে দিত বড় বড় ব্যাটসম্যানদের স্ট্যাম্প। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। তেমনভাবে সুযোগ পেলেন কই! তিনি দেবাশিষ মোহান্তি। আজকে আবার তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের সিলেকশন প্যানেলে রয়েছেন।
একটু পিছনে যাওয়া যাক। আগের টেস্টেই জয়সূর্য ৩৪০ আর মহানামা ২২৫।পোড়খাওয়া ভারতীয় বোলারদের ওপর যথেচ্ছ হামলা চালিয়ে ওঁদের জুড়িতে নতুন বিশ্বরেকর্ড।সঙ্গে অরবিন্দ ডি সিলভা'র সেঞ্চুরি।পরের টেস্টে এক নবাগত বোলার এই তিনজনকেই আউট ক'রে ৪ উইকেট পেলেন। জাতীয় দলে দেবাশিষ মোহান্তির শুরুটা এমনই। অথচ সুযোগ পেলেন মাত্র দুটো টেস্ট খেলার। একদিনের ক্রিকেটেও শুরুর দিকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। সাহারা কাপের ৫ ম্যাচের একদিনের সিরিজে পাকিস্তানকে ৪-১ ব্যবধানে হারায় ভারত। আগাগোড়া ভালো বোলিং সমেত আনোয়ারকে তিনবার আউট করেন দেবাশিষ।
১৯৯৯-এর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। শ্রীনাথের থেকে চারটে ম্যাচ কম খেলেও। বোলিং গড় ৩০'এর কম রেখে ৪৫টা ওয়ান ডে'তে গোটা ষাটেক উইকেট। শ্রীনাথ-প্রসাদের পাশে তৃতীয় পেসার হিসেবে বেশ মানিয়ে নিচ্ছিলেন। উইকেট শিকারী হিসেবে অজিত আগরকরের সাফল্য বেশি সেটা মেনে নিয়েও প্রশ্ন তোলাই যায়,দেবাশিষ মোহান্তির আরও একটু সুযোগ প্রাপ্য ছিলো ছিলো না কি? বিশেষ করে যিনি দলীপ ট্রফিতে ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার অতি বিরল কৃতিত্ব দেখান।
সেই ১০'এ ১০ বোলিং ফিগারে দ্রাবিড়-লক্ষ্মণের উইকেটও ছিল। বছর চারেকের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে একেবারেই ইতি প'ড়ে যায় জাহির খানের আবির্ভাবে। ব্যাট হাতেও বিগ হিটে বেশ দড় ছিলেন। রাত ফুরোবার অনেক আগেই তেজি দীপশিখা নিভে গেল নাকি কেউ ফুঁ দিয়ে?
১৯৭৬ সালে আজকের দিনে জন্মেছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় পেসার দেবাশিষ মোহান্তি। ১৯৯৩-৯৪ সালে ওড়িশা-অনূর্ধ-১৯ দলের হয়ে বাংলা অনূর্ধ-১৯ দলের বিরুদ্ধে তাঁর অভিষেক হয় কোচবিহার ট্রফির খেলায়। এরপর ১৯৯৬-৯৭ সালে বাংলার বিরুদ্ধে রঞ্জিতে খেলতে নেমেই ১৪৩ রানে ৯ উইকেট তুলে নেন। প্রবীণ আমরে, সাবা করিম তাঁর শিকার ছিল।
সেই ম্যাচে তাঁর সঙ্গেই ডেবিউ হয় রোহন গাভাস্কার ও শিবসাগর সিং-এর কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলেন রঞ্জীব বিসওয়াল ও চেতন শর্মা। চেতন শর্মা দেবাশীষ মোহান্তির প্রতিভায় চমৎকৃত হয়ে নিজের খেলার জুতো ও নতুন মোজা তাঁকে উপহার দেন। সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তাঁর খেলোয়াড় জীবন শেষ। কিন্তু যার শুরু হলো তাকে এগিয়ে দেওয়া উচিত।
ওই মরশুমে রঞ্জিতে ২২ উইকেট পান। দলীপেও সুযোগ আসে। ফলে ভারতীয় দলে ডাক পান । কলম্বোর দ্বিতীয় টেস্টে তিনি বল করতে নেমে ডি'সিলভা সহ চার উইকেট পান। কিন্তু এর পরে আর একটিই টেস্ট খেলার সুযোগ আসে।
বিশ্বকাপে ডেবিউ ম্যাচে আবার চার উইকেট। যদিও ৪৫টি ম্যাচে ৫৭ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন কিন্তু দুর্ভাগ্য বেশি সুযোগ আসেনি। সম্প্রতি শচীন তেন্ডুলকার তাঁর স্মৃতি চারণায় জানিয়েছেন যে সইদ আনোয়ার দেবাশীষ মোহান্তির বল খেলতে সমস্যায় পড়তেন (৩ বার আউট হয়েছিলেন)।
২০০০-০১ সালে দিলীপ ট্রফির ম্যাচে দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ, বিজয় ভরদ্বাজ, সুনীল যোশী, শ্রীনাথ, আশীষ কাপুর, সমৃদ্ধ ব্যাটিং লাইন আপকে উড়িয়ে দিয়ে এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেন। উল্লেখ করা যায় তিলক নাইডু ও নন্দকিশোর ও দলে ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচে একাই ৯১ রানে ১৪ উইকেট নেন। লিভারপুল ও জেলা প্রিমিয়ার লিগের খেলায় ২০০৫-০৮ এর মধ্যে ৮০ ম্যাচে ৫০০ রান করেন ও ২৭২ উইকেট নেন। প্রথম শ্রেণির খেলায় ৪১৭টি ও লিস্ট এ খেলায় ১৬০টি উইকেট পাওয়া দেবাশীষ মোহান্তি আজ ৪৪ বছরে পড়লেন।
এবার দেবাশিষ মোহান্তি নির্বাচক হয়ে কেমন কাজ করেন সেটা দেখার। এখন নির্বাচক হয়ে ওড়িশা এবং পূর্বাঞ্চলের প্লেয়ারদের হয়ে কতটা লড়াই করতে পারেন সেটা দেখার বিষয়। এর আগে ওড়িশা থেকে যেটা নির্বাচক প্যানেলে ছিল সেই সঞ্জীব বিশওয়াল কিছু করতে পারেননি। দেবাশিষ মোহান্তির থেকে পূর্বাঞ্চলের প্লেয়ারদের হয়ে একটা আওয়াজ তোলার প্রত্যাশা রয়েছে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের।