ছোটবেলায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘লালু’ গল্পটি যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা জানবেন সেখানে গল্পের নায়ক অর্থাৎ লালু এক ঝড় জলের রাত্রে শ্মশানে মড়া পোড়াতে গিয়ে আবিষ্কার করে, মৃতদেহ মাঝেমধ্যেই নড়েচড়ে উঠছে। তারপর যথারীতি ভয়ে বাবা গো...মা গো বলে দে দৌড়। সে গল্পের শেষের দিকে কৌতুকপূর্ণ মোচড় থাকলেও, এই প্রবন্ধটি লিখতে গিয়ে মনে পড়ে গেল সেই ছেলেবেলার গল্পই। কারণ, সম্প্রতি একটি গবেষনায় উঠে এসেছে বেশ চমকপ্রদ একটি তথ্য।
মৃত্যুর পরেও বেশ নড়াচড়া করে মৃতদেহ। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। এ রকমই একটি চমকপ্রদ তথ্য তুলে ধরেছেন এক অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী। যথা সময়ে মৃতদেহ সৎকার করা না হলে দেহে পচন ধরতে শুরু করে। সেই পচনের প্রক্রিয়া চলাকালীনই নড়াচড়া করে মৃতদেহ। টাইম ল্যাপস ক্যামেরা ও ফোটোর সাহায্যে এক গবেষণাকেন্দ্রে একাধিক মৃতদেহের নড়াচড়া রেকর্ড করেছেন ওই বিজ্ঞানী। এর ফলে ডিটেকটিভ ও প্যাথলোজিস্টদের কাজের উপরে প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক গবেষণাগারে নিয়মিত যাতায়াত করেছেন অ্যালিসন উইলসন নামে ওই বিজ্ঞানী। তিনি তাঁর গবেষণার পরে রসিকতা করে বলেছেন, ‘রেস্ট ইন পিস’ বলি বটে আমরা, কিন্তু ঠিক ‘রেস্ট’ হয় না তাঁদের। মৃতদেহের নড়াচড়া এতটাই হয় যে, রীতিমতো চোখে পড়ার মতো। একটি দেহের দুই হাত মৃত্যুর সময় ছিল দেহের একদম দুপাশে, গায়ের সঙ্গে লেগে। কিন্তু কিছুদিন পরে দেখা যায়, হাত দুটি দেহ থেকে দূরে সরে গেছে। এই নড়াচড়া হয় দেহের পচন প্রক্রিয়া চলার সময়। যে সময় দেহটি মমির মতো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শুকনো হতে শুরু করে ও লিগামেন্টগুলি শুকিয়ে যায়।
সিডনির যে গবেষণাগারে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে, সেটিতে এখন মোট ৭০টি দেহ আছে। এখানে পোস্টমর্টেম মুভমেন্ট বা মৃত্যুর পরে দেহের নড়াচড়া নিয়ে কাজ চলছে। কেন্দ্রটির নাম অস্ট্রেলিয়ান ফেসিলিটি ফর ট্যাফোনমিক এক্সপেরিমেন্টাল রিসার্চ। মৃত্যুর পরে দেহ রেখে দিলে দেহ কেন নড়ে, কোন কোন অংশ বেশি নড়ে, এভাবে দেহ নড়ার ফলে অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে কোন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, এ সব নিয়েই ওই কেন্দ্রে গবেষণা চলছে। অ্যালিসন তার গবেষণা নিয়ে একটি পেপার প্রকাশিত করেছেন ‘ফরেন্সিক সায়েন্স ইন্টারন্যাশন্যাল: সিনার্জি’ জার্নালে।
মৃতদেহ নড়াচড়ার পিছনে কোনও ভুতুড়ে কারণ নয়, বরং রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখা। মৃতদেহ জ্যান্ত হয়ে যাওয়া নিয়ে এতদিন যাঁরা বিভিন্ন ভুতুড়ে, কাল্পনিক গল্প ফেঁদেছেন অথবা যাঁরা ভুতের ভয়ে একটু বেশিই ভীত, এই কথা শোনার পর তাঁদের চিন্তাধারা কতটা পাল্টাবে, এখন সেটাই দেখার।