এই যে ভোজন রসিক বাঙালির রসনা চিরাচরিত রকমারি নানান পদের সম্ভারে সমৃদ্ধ তার মূল অনুপানের গোপন ভান্ডারের সন্ধানই আজ দেব। আর এ ব্যাপারে যিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন জানাব তার কথাও। সেই কথা সদ্য নগররুপী কলকাতার এক অজানা কথা।
নগররুপী কলকাতার আত্মপ্রকাশ ঘটে জব চার্নকের আগমনের পর। কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই কলকাতার অস্তিত্ব ছিল। কলকাতায় ইংরেজদের আগমনের পর অর্থাৎ সেই নগরায়ন পর্বের এক্কেবারে শুরু থেকেই বিভিন্ন বণিকের আগমন ঘটতে থাকে। ফলে সৃষ্টি হয় বাজারের। এই বাজারের মধ্যেই অন্যতম ছিল কলকতার বড়বাজার। এখনো তার অস্তিত্ব বহাল তবিয়তেই আছে। কি নেই সেখানে!
এবার বলব সেই সদ্য নগরের কলেবর প্রাপ্ত কলকাতার বড়বাজারের এক বিশাল দোকান সম্পর্কে, যেখানে পাওয়া যেত হরেকরকম সুস্বাদু রান্নার মূল অনুপান অর্থাৎ যাবতীয় মশলা। কিন্তু সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বলবো এই বড়বাজার বলতে যে বিশাল ব্যবসার আড়ৎ বোঝায় তার পটভূমি।
কথিত আছে ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সপ্তগ্রাম থেকে গোবিন্দপুরে এসে বসতি স্থাপন করেন মুকুন্দরাম শেঠ। পরে ব্রিটিশদের আগমনের পর সুতানুটির বণিক সম্প্রদায় (বণিক, মল্লিক, শেঠ, বসাক) একে একে ভিড় জমান বড়বাজারে। সেই থেকেই বড়বাজারের যাত্রা শুরু। যদিও এই নামকরণের ব্যাখ্যা হিসেবে বলা যায় এখানে ছিল বুড়ো শিবের মন্দির। জায়গাটির আসল পরিচিতি ছিল বুড়োর বাজার নামেই। কিন্তু কালক্রমে কিছু অবাঙালী ব্যবসায়ীদের উচ্চারণ দোষে দুষ্ট হয়ে সেই ‘বুড়োর বাজার’ আত্মপ্রকাশ করে ‘বড়বাজার’ নামে।
এবার আসি সেই রহস্যের ভান্ডার প্রসঙ্গে। ১৭৩৪সালে বাঁকুড়ার কোতলপুর থেকে কুলদেবতাকে সাথে নিয়ে কলকাতায় ভাগ্য পরখ করতে আসেন দয়ারামদাঁ। শুরু করেন মশলার কারবার। মশলার গুণমান ও দয়ারামের সততা, ব্যবহারের কারণে দোকানের সুখ্যাতি ছড়াতে থাকে, আসে সমৃদ্ধি। দোকান হয়ে ওঠে প্রত্যেক বাসিন্দাদের কাছে অপরিহার্য।
আর সেইসময় এই বাজারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল দয়ারাম পসারি। দোকানের খ্যাতি ছিল আকাশ ছোঁয়া। আর বলতে দ্বিধা নেই সেই মশলাই বহু দশক আপামর কলকাতাবাসীর হেঁসেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহন করে গেছে সুখ্যাতির সাথে। আর তাই আজও তার স্মৃতি জড়িয়ে আছে তিলোত্তমার বুড়োর বাজারে থুড়ি মধ্য-কলকাতার ব্যস্ততম এই বড়বাজারে।