বেশির ভাগ মানুষের কাছে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি(১৪৫২-১৫১৯) শুধু মাত্র শিল্পী। তাঁর আঁকা রহস্যময়ীর হাসির সন্ধান করতেই মানুষ যুগের পর যুগ কাটিয়ে দিয়েছে। আদতে কিন্তু তিনি কোনদিনই শুধু মাত্র শিল্পীর পরিচয়ে আটকে থাকেননি। নিজের সময় থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকা বিস্ময়কর প্রতিভা।
তিনি বিজ্ঞানী হিসাবেও সময়ের চাইতে এগিয়েছিলেন। একের পর এক আবিষ্কার করে গিয়েছিলেন। সেই আবিষ্কার তাঁর নিজের সময়ে তো বটেই পরবর্তী সময়েও নতুন চিন্তা ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে। ভিঞ্চির ভাবনার ওপর ভিত্তি করে গবেষণা এগিয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে। সেই তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন কনট্যাক্ট লেন্স।
প্রথম দিকে কনট্যাক্ট লেন্স তৈরি হয় কাচ থেকে। ১৮৮৭ তে। সে সময় কাচের তৈরি কনট্যাক্ট লেন্স দিয়ে পুরো চোখটাই ঢেকে দেওয়া হত। কিন্তু ভিঞ্চি তাঁর একটি স্কেচে দেখিয়েছিলেন ভবিষ্যতের কনট্যাক্ট লেন্স ঠিক কেমন হবে। পুরো চোখ কাচ দিয়ে ঢাকার বদলে কর্নিয়ায় লেন্সে জলের আস্তরণ বসিয়ে মানুষের চোখের দৃষ্টি শক্তি বদলে দেওয়া সম্ভব।
তাঁর ভাবনা প্রমাণ করার জন্য তিনি একটা পরীক্ষা করেছিলেন। এক বাটি স্বচ্ছ জল রাখেন। চোখে দৃষ্টি শক্তির সমস্যা আছে এমন এক ব্যক্তি কে সেই জলের মধ্যে দিয়ে সোজাসুজি তাকাতে বলেন। দেখা যায় জলের মধ্যে দিয়ে সেই ব্যক্তি স্পষ্ট দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছেন। তাঁর এই আবিষ্কার বিজ্ঞানে দুটো গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে। ইমপ্রুভড রিফ্রেকশন এবং ইমপ্রুভড পেরিফেরাল ভিজুয়াল ইকুইটি।
ভিঞ্চি নিজে হাতে কনট্যাক্ট লেন্সের নমুনা তৈরি করেছিলেন। ফানেলের মাধ্যমে। কিন্তু তা সংরক্ষন করা যায়নি। মানুষের অজ্ঞতার কারনেই নষ্ট হয়ে যায়। তাঁর সময় তাঁর আবিষ্কারকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
দ্য ভিঞ্চিই সর্বপ্রথম মাতৃগর্ভে অবস্থানরত শিশুর বৈজ্ঞানিক চিত্র অংকন করতে সক্ষম হন। উড়োজাহাজ আবিষ্কারের প্রায় ১৪০০ বছর আগে উড়োজাহাজের মডেলের ছবি লিওনার্দোর ছবি আঁকার খাতা থেকে পাওয়া গিয়েছিল।
মানবদেহের অ্যানাটমি নিয়েও বিস্তারিত গবেষণা করেছেন লিওনার্দো। তাঁর নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও গবেষণার উল্লেখ করেছেন প্রায় ১০০টি ড্রইংয়ে।
লিওনার্দো লেখালেখি করতেন উল্টো ধাঁচে, অর্থাৎ তাঁর লেখা পড়তে আয়নার দরকার পড়বে। লিওনার্দোর বিখ্যাত বিজ্ঞান গবেষণাগ্রন্থ ‘কোডেক্স লেসিস্টার’ ১৯৯৪ সালে কিনে নেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস।