পৌরাণিক মতে এমন একটা সময় ছিল যখন যদি কোনো সিদ্ধ পুরুষ বা সৎ পুরুষ বা নারী যদি অভিশাপ দিত তা হয়ে যেত সত্যি, অভিশাপের ফল ভোগ করতে হয়েছে অনেক সাধু সন্ন্যাসী কে, রাজা রানী কে এমনকি দেবদেবীদেরকেও অভিশাপের ফল ভোগ করতে হয়েছে এমন উদাহরণ পুরাণে ভুরিভুরি রয়েছে। আর কয়েকজন সাধু সন্ন্যাসী তো অভিশাপ দেওয়াকে জলভাতে পরিণত করেছিলেন, ঋষি অগস্ত্য অথবা ক্ষ্যাপা দুর্বাশা অভিশাপ দিতেন 'লাইক হট কচুরিস', আমাদের যেমন খিদে পায়, ঘুম পায় ওনাদের ঠিক তেমনি অভিশাপ পেতো। রামায়ণ মহাভারতে আর এই মহাকাব্যদুটির সাথে সম্পৃক্ত অনেক উপাখ্যানে রয়েছে অভিশাপের গল্প, সেরকমই এই অভিশপ্ত যোদ্ধার গল্প। যদিও এখানে কেউ কাউকে অভিশাপ দেয়নি, এখানে অভিশপ্ত ব্যক্তি না জেনেই পড়ে গিয়েছিলেন একটি ফাঁদে। পুরাণ মতে ভারতবর্ষের প্রসিদ্ধ সূর্য বংশে ইল বলে এক নরপতি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তখন রাজারা বিনোদনের জন্য মাঝে মাঝেই চলে যেতেন মৃগয়া করতে। তা ইলের একদিন ইচ্ছে হলো মৃগয়া যাবেন, তিনি গেলেন, সাথে গেলো মন্ত্রী সান্ত্রী পাইক বরকন্দাজ ইত্যাদি ইত্যাদি। ইল জঙ্গলে গেলেন, শিকার করছেন, হাতি গন্ডার মারছেন, তো বেশ কয়েকদিন থেকে ইল জঙ্গলেরই প্রেমে পড়ে গেলেন। ইল জঙ্গলে থাকবেন বলে খুঁজে বের করলেন এক গুহা, সেই গুহার অধিপতি ছিলেন একজন যক্ষরাজ, তিনি অনুপস্থিত বলেই ইল বুঝতে পারলেননা তিনি অন্যের সম্পত্তি দখল করে বসে আছেন।যক্ষরাজা আর রানী নিজেদের গুহায় ফিরে এসে তো দেখলেন গুহা তো বেহাত হয়েছে, যক্ষ রেগে গিয়ে ইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসলেন। যক্ষ সেনাবাহিনী যুদ্ধ শুরু করলো, কিন্তু ইল তো আর কম বড়ো যোদ্ধা ছিলেননা, তার কাছে যক্ষরা পেরে উঠলেননা। যক্ষ তখন তার রানীকে অনুরোধ করেন সে যেন মায়াবিনী হরিণীর রূপ ধরে ইলকে আকৃষ্ট করে উমাবনে নিয়ে যায়, দেবাদিদেবের অভিশাপে কোনো পুরুষ উমাবনে গেলেই সে নারীতে পরিণত হবে, আর যক্ষরাজ্ ফিরে পাবেন তার গুহা। যক্ষিনী হরিণীর রূপ ধরে ভুলিয়ে ইল কে নিয়ে গেলেন উমাবনে আর ইল অভিশপ্ত হয়ে নারীতে রূপান্তরিত হলেন। স্ত্রীরূপে ইল হলেন অতীব সুন্দরী আর তার সেই রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে চন্দ্রের পুত্র বুধ তাকে পছন্দ করে ফেলেন। ইল ও বুধের বিবাহের পর তাদের পুরুরব নাম এক পুত্র সন্তান হয়। পুরুরব খেয়াল করেন তার মা সবসময় দুঃখিত হয়ে থাকেন ভালো করে হাসেন না, পিত বুধ কে জিজ্ঞাসা করতেই ইলের পুত্র পেলেন তার উত্তর। শাপমুক্ত হওয়ার জন্য পুরুরব বুধ এবং ইল কঠোর তপস্যা শুরু করেন, এবং তপস্যার শেষে দেবাদিদেব ইলকে শাপমুক্ত করেন, ইল আবার পরিণত হন একজন সশস্ত্র যোদ্ধায়।