বেলজীয়ান কার্টুনিস্ট হার্জের অমর সৃষ্টি দুঃসাহসী তরুণ সাংবাদিক টিনটিন এবং তার বন্ধু ক্যাপ্টেন হ্যাডক আর প্রফেসর ক্যালকুলাস একবার জড়িয়ে পড়ে এক রহস্যময় অসুখের সাথে, একথা আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে কিন্তু সত্যি কি কোনো রহস্য রয়ে গেছে তুতেনখামেনের সমাধিতে? সত্যির পরিমান কতটা? আর কতটাই বা গুজব তা আন্দাজ করা না গেলেও একটা কথা নিঃসন্দেহেই বলা যায় যে ফারাও তুতেনখামেনের মৃত্যু আজও ঘোর রহস্যময়। তুতেনখামেন নামটার সাথেই যেন রহস্য আর অলৌকিকতা একই সঙ্গে পথ চলতে থাকে। মনে প্রশ্ন থাকে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে যখন তুতেনখামেনের মমি উদ্ধার করা হয় তার পরে সেই প্রত্নতাত্বিক উৎখননের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনেই কি ছিল মমির অভিশাপ? এই নিয়ে রয়েছে নানান যুক্তি-অপযুক্তি-কল্পকাহিনী। এই ঘটনার পরেও কিন্তু প্রত্নতাত্বিকদের তুতেনখামেন বা তার সমাধি নিয়ে আগ্রহ বিশেষ কিছু কমেনি উল্টে বেড়েছে।
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্বিকরা ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তাদের গবেষণাপত্রে জানান তুতেনখামেনের মৃত্যুর কারণ, তাঁদের মত তুতেনখামেন মারা গিয়েছিলেন মাথার পিছনে ভারী কোনো বস্তু দিয়ে আঘাতের কারণে, গবেষকরা তাঁর মাথায় জমাট বাঁধা রক্তের চিহ্নও আবিষ্কার করেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ঐতিহাসিকদের মধ্যে উঠে এসেছে হত্যারহস্যের তত্ব। কারো কারো মত হত্যা নয়, তুতেনখামেনের মৃত্যু ছিল নেহাতই একটা দুর্ঘটনা। ঘোড়ার গাড়ি থেকে অসাবধানে পড়ে গিয়ে মারা যান তুতেনখামেন। মিশরবিদ জাহি হাওয়াস মনে করেন খুব সম্ভবত ম্যালেরিয়ার কষ্ট ভোগ করেই মৃত্যু হয় তুতেনখামেনের। জার্মানির একটি গবেষক দলের দাবী ছিল আরও অদ্ভুত, তারা দাবী করেন যে প্রাচীন মিশরে পরিবারের মধ্যেই বিবাহ সীমাবদ্ধ ছিল, আর সেই কারণেই তুতেনখামেন জন্মসূত্রে পেয়েছিলেন পারিবারিক রক্তজনিত রোগ, যার ফলে তার শরীরে লোহিত কণিকার অভাব ঘটে এবং তিনি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান। তুতেনখামেনের সমাধিতে যে সমস্ত ছবি দেখতে পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে তুতেনখামেনের যুদ্ধ করার ছবিও, এর থেকে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন হয়তো যুদ্ধক্ষেত্রেই তুতেনখামেন মারা গিয়েছিলেন, এবং এই ক্ষেত্রে তারা মমির মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্নকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। ফারাও তুতেনখামেনকে নিয়েই এরকম নানান গবেষণা, মতামত, কল্পকাহিনী আমাদের প্রতিনিয়ত ভাবিয়ে তুলেছে, হার্জ থেকে সত্যজিৎ রায় বা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কেউই এর ব্যতিক্রম ছিলেননা, তুতেনখামেন এবং তার সমাধি হয়তো চিরকালই থেকে যাবে রহস্যের পর্দায় ঢাকা, সেটাই হয়তো মমির অভিশাপ।